দীর্ঘ ৪৫ বছর পর ফের প্রতিবেশী দুই দেশ চীন ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। হিন্দুস্তান টাইমস, এনডিটিভ, গ্লোবাল টাইমস ও আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
সোমবার রাতে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় দুই পক্ষের সেনাদের মধ্যে ওই সংঘর্ষ হয় বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম। ওই সংঘর্ষে তিন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছে। এতে ৫ চীনা সেনাও নিহত হয়েছে বলে দাবি নয়াদিল্লির। তবে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি চীন।
সেনা সূত্র থেকে জানাযায়, দুপক্ষের সংঘর্ষে গোলাগুলি চলেনি। পাথর এবং রড নিয়ে মারামারিতেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল বিপিন রাও স্থল, নৌ ও বায়ুসেনা প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (এলএসি) উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা চলাকালীনই গতকাল রাতে সংঘর্ষ বাধে। তাতে ভারতীয় সেনার এক অফিসার এবং দুই জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। দুপক্ষের উচ্চপর্যায়ের অফিসারেরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বৈঠক করছেন। চিনের সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে রয়েছেন ৩ নম্বর পদাতিক ডিভিশনের প্রধান, মেজর জেনারেল অভিজিৎ বাপত। তবে শান্তিপ্রক্রিয়া চলাকালীন ঠিক কী কারণে রাতের অন্ধকারে দুপক্ষের সংঘর্ষ শুরু হল, তা নিয়ে কিছু বলা হয়নি সেনা বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ।
চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের দাবি, ভারতীয় সেনাই প্রথম হামলা চালিয়েছে। চিনের পাঁচ সেনা নিহত এবং ১১ জন আহত হয়েছেন।
সেনার নর্দার্ন কম্যান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল দীপেন্দ্র সিংহ হুডা এদিন বলেন, আগের অচলাবস্থাগুলির তুলনায় এবারের পরিস্থিতি অনেক গুরুতর। সমস্যা সমাধানের পথে দ্রুত এগোতে হবে।
এর আগে ১৯৭৫ সালে শেষবার চীন- ভারতীয় সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। ওই সংঘর্ষে অরুনাচল প্রদেশে চীনা সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিল এক ভারতীয় সেনা।
প্রসঙ্গত, গত মাসের গোড়ার দিকে পূর্ব লাদাখের প্যাংগং লেকে দু দেশের সেনাদের মধ্যে হাতাহাতি ও পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল। এতে দু পক্ষের কমপক্ষে ১৩ সেনা আহত হওয়ার খবর দিয়েছিল আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো। তখন থেকেই পূর্ব লাদাখের চার স্থানে একেবারে মুখোমুখি অবস্থান করছে চীন ও ভারতের সেনারা।
এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে দু দেশের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠকও হয়েছে একাধিকবার। কিন্তু এসব বৈঠক যে কোনও কাজে আসেনি সোমাবারের ঘটনা তার প্রমাণ। শেষ অবদি এই সংঘাত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই দেখার বিষয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চীন-ভারত যুদ্ধের সম্ভবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।