শীতকালে বাজারে নানা রকম সবজির সমারোহ থাকে। আর এই সকল সবজির মধ্যে বাঁধাকপি অন্যতম। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই বাঁধাকপি নানা ভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। আজ আমরা জানবো এই বাঁধাকপির ৬ টি মজাদার রেসিপি সম্পর্কে। তার আগে আসুন জেনে নেই বাঁধাকপির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।
বাঁধাকপির পুষ্টিগুণঃ বাঁধাকপিতে রয়েছে সালপোরফেন-এর মতো অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান, যা শরীরে প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশনের মাত্রা কমায়। শরীরে ইনফ্ল্যামেশনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে একদিকে যেমন দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তেমনি ঝুঁকি বাড়ে ক্যানসারের মতো মরণ রোগেরও। বাঁধাকপি ফাইবারে ভরপুর। ফলে এটি যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়, তেমনি একাধিক পেটের রোগের সমস্যাও দূর করে। বাঁধাকপিতে রয়েছে একেবারে কম মাত্রায় ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেট। ফলে এটি খেলে ওজন বৃদ্ধির কোনও সম্ভাবনাই থাকে না।
কমপ্লিমেনটারি অ্যান্ড অলটারনেটিভ মেডিসিনে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে টানা ৬০ দিন বাঁধাকপি খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসে। সেই সঙ্গে রেনাল ফাংশনের উন্নতি ঘটে এবং ওজন কমতে শুরু করে। বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং হাইপার-গ্লাইসেমিক উপাদান রয়েছে, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম। এই সবকটি উপাদানই হাড়ের সুস্থতায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাঁধাকপি শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি দূর করে। আধা কাপ সেদ্ধ বাঁধাকপিতে যে পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে, তা পুরো দিনের চাহিদার প্রায় ৪৭ শতাংশ পূরণ করে। এছাড়াও ভিটামিন কে-এর চাহিদা পূরণ করে প্রায় ১০০ শতাংশ। বাঁধাকপিতে থাকা ফোটোনিউট্রিয়েন্টস, যেমন পলিফেনল এবং গ্লুকোসিনোলেট শরীরে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ফলে হার্টের রোগের প্রকোপ কমানোর পাশাপাশি ক্যানসার, অ্যালঝাইমারস এবং ম্যাকিউলার ডিজেনারেশনের মতো রোগের সম্ভাবনা দূর হয়। প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে থাকায় নিয়মিত বাঁধাকপি খেলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে। সেই সঙ্গে নার্ভের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে। বাঁধাকপিতে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন যা দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়।
বাঁধাকপির ৬ টি রেসিপি:
১। পুরভরা বাঁধাকপি
উপকরণ :
বাঁধাকপি বড় ১টা,
মাখন ১৫০ গ্রাম,
মুরগির মাংস ২২৫ গ্রাম (সেদ্ধ করে কুচি করা),
পাউরুটি ৫০ গ্রাম,
সবজিসেদ্ধ পানি ১ কাপ,
পেঁয়াজ ২টি,
গাজর ১ কাপ,
কাঁচা মরিচকুচি ১ টেচিল চামচ,
লবণ স্বাদমতো,
গোলমরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ,
পেঁয়াজকুচি আধা কাপ।
প্রণালী: ফুটন্ত লবণ-পানিতে গোটা বাঁধাকপি পাঁচ মিনিট সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিন। পানিটা রেখে দিন। কপির ওপরে কেটে ভেতরটা গর্ত করে নিন। ওপরের কাটা অংশ দিয়ে ঢাকনার মতো বানিয়ে নিন। প্যানে ৭০ গ্রাম মাখন গরম করে একটি পেঁয়াজকুচি দিয়ে ভুনে নিন। হালকা বাদামি হলে সেদ্ধ মাংস ও কাঁচা মরিচ দিয়ে দুই বা তিন মিনিট নাড়াচাড়া করুন।দুধে পাউরুটি ভিজিয়ে অতিরিক্ত দুধ চিপে ফেলে দিন। রান্না করা মাংসে ভেজানো পাউরুটি, লবণ ও গোলমরিচ দিয়ে মিলিয়ে পুর তৈরি করে নিন।এবার বাঁধাকপিতে পুর ভরে ঢাকনা দিয়ে সাজিয়ে দিন। ওভেনপ্রুভ ডিশে বাকি মাখন গলিয়ে গাজর ও ভাঁজে খোলা পেঁয়াজ বিছিয়ে দিন। এতে কপিসেদ্ধ পানি দিয়ে পুরভরা কপি বসিয়ে অল্প আঁচে রান্না করুন দেড় বা দুই ঘণ্টা। ঢাকনা দিতে হবে। ওভেন প্রিহিট করে নিতে হবে।
২। বাঁধাকপির রোল
উপকরণ:
৮টি বাঁধাকপি পাতা
৪টি মাঝারি আলুর সিদ্ধ ও ভর্তা
১/২ কাপ মটরশুঁটি সিদ্ধ ও ভর্তা
১ চা চামচ চ্যাট মশলা
১ কাপ বেসন
১/২ চা চামচ লাল মরিচের গুঁড়া
১/২ চা চামচ বেকিং সোডা
লবণ স্বাদমত
তেল
প্রণালী: প্রথমে বাঁধাকপি থেকে পাতাগুলো আলাদা করে ফেলুন। পাতাগুলো লবণ পানিতে সিদ্ধ করে নিন। এতে করে পাতাগুলো নরম হবে এবং ভাঁজ করা যাবে।এবার আলু ভর্তা, মটরশুঁটির ভর্তা, লবণ, চ্যাট মশলা দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।তারপর সিদ্ধ বাঁধা কপির পাতার ভিতর আলু, মটরশুঁটির মিশ্রণটি দিয়ে দিন।এবার বাঁধাকপির পাতাটিকে রোলের মত করে পেঁচিয়ে নিন।এখন বেসন, লবণ, লাল মরিচের গুঁড়া, বেকিং সোডা, এবং পানি দিয়ে বাটার তৈরি করে নিন।একটি প্যানে তেল গরম করতে দিন।তেল গরম হয়ে এলে বাঁধাকপির রোলগুলো বেসনে ডুবিয়ে তেলে দিয়ে দিন।বাদামী রং হয়ে এলে নামিয়ে ফেলুন।সস দিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার মচমচে বাঁধাকপির রোল।
৩। বাঁধাকপির পোলাও
উপকরণ :
পোলাও চাল ৩ কাপ,
কাঁচামরিচ ৩-৪টা,
দারুচিনি-এলাচ ৪-৫টি,
পানি ৬ কাপ,
পেঁয়াজ কুচি ২ টেবিল চামচ,
ঘি বা তেল চার ভাগের এক কাপ,
বাঁধাকপি (গ্রেট করা) ১ কাপ,
লেবুর রস ২ চা চামচ,
তেজপাতা ২-৩টি,
নারকেল (কুড়ানো) ১ কাপ,
লবণ প্রয়োজনমতো,
আদা বাটা আধা চা চামচ।
প্রণালী: প্রথমে বাঁধাকপি ধুয়ে গ্রেট করে নিন। সামান্য পানি ও লবণ দিয়ে গ্রেট করা বাঁধাকপি ভাপ দিয়ে নিন। এবার পোলাউয়ের চাল ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন।অন্য পাত্রে চুলায় তেল অথবা ঘি দিয়ে গরম হলে তাতে পেঁয়াজ কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা, দারুচিনি, এলাচ, লবণ ও তেজ পাতা দিয়ে নাড়ুন।একটু ভাজা ভাজা হলে তাতে পানি দিয়ে দিন। পানি ফুটে এলে তাতে চাল দিয়ে নেড়ে ঢেকে দিন। ১০ মিনিট পর পানি শুকিয়ে এলে তাতে বাঁধাকপি ও নারকেল কুচি, লেবুর রস দিয়ে ৫ মিনিট দমে রাখুন।এর পর নামিয়ে সার্ভিং ডিসে ঢেলে গরম গরম পরিবেশন করুন।
৪। ডিম দিয়ে মজাদার বাঁধাকপি ভাজি
উপকরণ :
বাঁধাকপি ,
ডিম ,
লবণ ,
গোটা জিরা ,
বেশি করে পেয়াজ কুচি ,
কাঁচামরিচ ফালি ও তেল ।
প্রণালী: প্রথমে বাঁধাকপি কুচি করে কেটে গরম পানিতে ভাব দিয়ে নিন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে হাতে চিপে নিন। এবার একটি কড়াইয়ে পরিমান মত তেলে পেয়াজ, কাঁচামরিচ ও গোটা জিরা ফোড়ন দিয়ে ডিম ভেঙ্গে নাড়তে থাকুন। ডিম হালকা ভাজা ভাজা হলে বাঁধাকপি ঢেলে লবণ দিয়ে নাড়তে থাকুন। বাঁধাকপি ভাজা হলে চুলা থেকে নামিয়ে রুটি অথবা ভাতের সাথে পরিবেশন করুন।
৫। বাঁধাকপি দিয়ে মুরগি
উপকরণ:
দেশি মুরগি ১টি,
পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ,
বাঁধাকপি ২ কাপ (বড় করে কাটা) রসুন বাটা ১ চা-চামচ,
আদা বাটা ১ চা-চামচ,
হলুদের গুঁড়া পরিমাণমতো,
মরিচের গুঁড়া পরিমাণমতো,
জায়ফল জয়ত্রী বাটা আধা চা-চামচ,
ধনে বাটা ১ চা-চামচ,
আস্ত গরমমসলা ও জিরা টেলে গুঁড়া করা আধা চা-চামচ,
তেজপাতা ২টি,
আস্ত দারুচিনি ২ টুকরা,
আস্ত এলাচি ৪-৫টি।
প্রণালী:মুরগি ভালো করে ধুয়ে নিয়ে লবণ, আদা, রসুন বাটা দিয়ে ম্যারিনেট করে রাখুন।কড়াইতে তেল দিয়ে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে বাদামি করে ভাজতে হবে। আদা বাটা, রসুন বাটা দিয়ে ভালো করে কষান। একে একে ধনে বাটা, হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া, আস্ত গরমমসলা, তেজপাতা, লবণ দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে। পরিমাণমতো পানি দিতে হবে।কষানো শেষে মসলা থেকে তেল ছাড়লে ম্যারিনেট করা মাংস দিন। ভালো করে নাড়তে হবে জায়ফল জয়ত্রী বাটা দিয়ে। মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে বাঁধাকপির টুকরো দিন। বাঁধাকপি দিয়ে অল্প আঁচে ঢেকে রাখুন। ৫-১০ মিনিট করে জিরা, গরমমসলার গুঁড়া দিতে হবে। একটু ঘি দিয়ে নামিয়ে ফেলুন।
৬। বাঁধাকপির সালাদ
উপকরণ:
বাঁধাকপি-কুচি ২ কাপ।
পেঁয়াজ-কুচি ২টি।
শুকনা মরিচ ৩টি।
ধনেপাতা-কুচি ১ টেবিল-চামচ।
সরিষার তেল আধা চা-চামচ।
লবণ স্বাদ মতো।
পদ্ধতি: বাঁধাকপি ধুয়ে কুচি করে রাখুন। শুকনা-মরিচ সামান্য তেলে ভেজে নিন। পেঁয়াজ, শুকনামরিচ, লবণ, ধনেপাতা-কুচি সরিষার তেল দিয়ে মাখাতে হবে। তারপর এই মিশ্রণের সঙ্গে বাঁধাকপি-কুচি ভালো ভাবে মাখালেই তৈরি হয়ে যাবে সালাদ। চাইলে একটা টমেটো কুচিও সঙ্গে দিয়ে দিতে পারেন।