শেরপুর, ময়মনসিংহ: শেরপুরে পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানিতে ভেসে গেছে ৭ হাজার পুকুরের মাছ। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০ কোটি টাকা।
এতে চরম বিপাকে পড়েছেন ৫ হাজার মৎস্য চাষি। এদের ভাগ্যে জুটেনি সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা।
ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ধারদেনা ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শত শত মৎস্য চাষি লাভবান হওয়ার আশায় মাছ চাষ করেছিলেন।
কিন্তু গত ৩ অক্টোবর জেলার সীমান্তের মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও চেল্লাখালি নদীর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিতে শেরপুর সদর, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী ও নকলা উপজেলার ৭ হাজার পুকুরের মাছ ভেসে যায়। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭০ কোটি টাকা।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে ৫ হাজার মৎস্য চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হবে।
পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে মাছের ক্ষতি হওয়ায় জেলায় আমিষের চাহিদা মেটানো কঠিন হতে পারে বলে জানা গেছে।
শেরপুর জেলায় প্রতিবছর আমিষের চাহিদা মেটাতে ৩২ মেট্রিকটন মাছ প্রয়োজন হলেও উৎপাদন হতো ৩৫ মেট্রিকটন। উৎপাদিত মাছ জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরে রপ্তানি করা যেত। এ অবস্থায় মৎস্য চাষিরা ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে চাহিদা মেটানো কঠিন হবে।
ঘাগড়া সরকার পাড়া গ্রামের মৎস্য চাষি জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ২০২৩ সালে পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে তাদের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছিল সেই ক্ষতি এখনো তারা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
সুরিহারা গ্রামের মৎস্য খামারি সুরুজ মিঞা জানান, তার ৫৬ একর জমির প্রজেক্টের প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। তিনি এখন দিশেহারা।
বন্দভাটপাড়া গ্রামের মৎস্য খামারি উজ্জ্বল মিয়া জানান, তার ১০ একর প্রজেক্টের ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। দাড়িয়ারপাড় গ্রামের সুলতান মিয়ার ১০ একর প্রজেক্টের ২০ লাখ টাকা মাছ ভেসে গেছে।
কালিবাড়ি গ্রামের হাজি আশরাফ আলীর ২০ একর প্রজেক্টের ১ কোটি টাকার মাছ ভেসে যায়। একই গ্রামের গোলাম মোস্তফার ১০ একর প্রজেক্টের ২০ লাখ টাকার মাছের ক্ষতি সাধিত হয়।
এ রকম ৫ হাজারেরও বেশি মৎস্য চাষিদের সমস্ত মাছ ভেসে গেছে। এখন তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খামারিরা পায়নি কোনো সাহায্য সহযোগিতা।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে খামারিদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া গেলে চাষিদের পুনর্বাসন করা হবে।