বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশের ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দেশটিকে দেওয়া ২০ কোটি ডলার ঋণের সুদ দূরের কথা আসল অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তিন মাসের কিস্তিতে টাকা ফেরত পাওয়ার কথা থাকলেও ২৪ মাসেও আদায়ের ঘর শূন্য। শুধু বারবার ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ মেয়াদও চলতি মাসে শেষ হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতিতে সুদ দূরে থাক, আসলের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এ অবস্থার পরও শ্রীলঙ্কা সরকার আর্থিক দেউলিয়াত্ব কাটাতে নতুন করে ২৫ কোটি ডলার ধার চেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, শতভাগ ঝুঁকির পরও শ্রীলঙ্কাকে রিজার্ভ থেকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। শ্রীলঙ্কার যে কিস্তি পরিশোধের মতো অবস্থা ছিল না, তা আগে থেকেই জানা ছিল। শ্রীলঙ্কার চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ঋণের অর্থ নিকট ভবিষ্যতে তো নয়ই, আগামী ২৫ বছরেও ফেরত পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতে, আগে সংকটে পড়া দেশগুলোর ঘুরে দাঁড়াতে কয়েক দশক লাগত। সংকট উত্তরণে আইএমএফের তৈরি গাইডলাইন অনুসারে, শ্রীলঙ্কা এখন যে বড় সংকটে আছে, তাতে অর্থনীতি স্থিতিশীল হতে ১০ বছরের বেশি সময় লাগবে। এরপর রিজার্ভ বাড়াতে লাগতে পারে আরও ১০ বছর। আবার বড় ঋণ আগে পরিশোধ করতে হবে। সেখানে বাংলাদেশের ঋণ মাত্র ২০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র মো. সরওয়ার হোসেন বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার কাছ থেকে ঋণের অর্থ আদায় নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। তবে দেশটির অবস্থা স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আগামী সেপ্টেম্বরে ঋণ পুনঃ তফসিল করা হবে। ঋণ আদায়ে সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’
তথ্যমতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে শ্রীলঙ্কাকে ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট ৫ কোটি ডলার, ৩০ আগস্ট ১০ কোটি ডলার এবং ২১ সেপ্টেম্বর ৫ কোটি ডলার ছাড় করা হয়েছিল। প্রথম কিস্তি পরিশোধ করার জন্য শ্রীলঙ্কাকে লন্ডন ইন্টার ব্যাংক রেটের (লাইবর) সঙ্গে অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদহারে ঋণ দেওয়া হয়। তিন মাসে ঋণ শোধ করতে না পারলে শ্রীলঙ্কাকে দ্বিতীয়বারের মতো একই হারে বাড়তি সময় দেওয়া হয়। তবে ছয় মাস পার হলে সুদের হার নির্ধারণ করা হয় লাইবরের সঙ্গে বাড়তি ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
জানা যায়, গত বছর শেষে শ্রীলঙ্কার মোট ৯ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে বিদেশি ঋণ ৫ হাজার ১০০ কোটি ডলার। তার মধ্যে আন্তর্জাতিক সভরেন বন্ডের (আইএসবি) ১ হাজার ১৮০ কোটি ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৪৬০ কোটি ডলার, জাপানের ১৮০ কোটি ডলার এবং চীনের ১৭০ কোটি ডলার।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক এবং আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক টু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ সাধারণত খোয়া যায় না। তবে দেশ যদি দেউলিয়া হয়, তখন ভিন্ন দিকে মোড় নেয় বিষয়টি। সে ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন দেখা দেয়। তখন সুদ বাদ দিয়ে সেটেল (নিষ্পত্তি) করা হয়। কোনো কোনো দেশের ক্ষেত্রে আসলেরও কিছু বাদ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে অর্থ ফেরত পেতে দেশটিকে স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত সময় দিতে হয়।