- ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচন রুখে দিন: রিজভী
- মানুষ বলছে কিসের ভোট? আমরা এই ভোট দিতে যাবো না: মান্না
- আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করেছে সরকার বিরোধী আইনজীবীরা
সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। সোমবার রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়ে দলটির জাতীয় সমন্বয় কমিটির বর্ধিত সভায় এ আহ্বান জানানো হয়। সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বর্তমান অবৈধ তফসিল বাতিল করে এবং সংবিধানের ১২৩(৩)(খ) অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে নির্বাচন পরিচালনাসহ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার লক্ষ্যে ন্যূনতম সমঝোতার ভিত্তিতে ‘জাতীয় সমঝোতা সনদ’ গ্রহণ এবং পরবর্তী সংসদের প্রথম অধিবেশনে গৃহীত ‘জাতীয় সমঝোতা সনদ’র ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কারের জন্য বিল পাশ করতেও আহ্বান জানানো হয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশ আজ ভয়াবহ দুর্যোগের মুখে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান অবৈধ সরকার তাদের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আগামী ৭ই জানুয়ারি একটা ‘ডামি নির্বাচন’ করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা দেশকে স্থায়ীভাবে একটি নির্বাচনবিহীন দেশ বা রাষ্ট্রে পরিণত করার পাঁয়তারা করছে। তাদের এই হীন প্রচেষ্টা যদি সফল হয় এবং তারা যদি দেশ থেকে নির্বাচন ব্যবস্থা তুলে দিতে পারে তাহলে এদেশের নাগরিকরা প্রজায় পরিণত হবে। কারণ বর্তমান দুনিয়ায় যে রাষ্ট্রের জনগণের ভোটাধিকার আছে তারা নাগরিক আর যাদের নেই তারা প্রজা। দেশকে ধাপে ধাপে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়ার এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র রুখতে ৭ই জানুয়ারীর ডামি নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করতে সভা থেকে দেশবাসীকে আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি সকলে মিলে আসন্ন এই দুর্যোগ থেকে দেশ রক্ষায় দলমত নির্বিশেষে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানানো হয়।
৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচন রুখে দিন: রিজভী
আগামী ৭ই জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন রুখে দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার দুপুরে গুলশান-২ নম্বরের আশপাশের এলাকায় লিফলেট বিতরণ শেষে এ আহ্বান জানান তিনি। রুহুল কবির রিজভী বলেন, অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। এটা গোটা জাতিকে প্রবঞ্চিত করা। এই অবৈধ নির্বাচনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে, এ নির্বাচন বর্জন করতে হবে। সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ জনগণকে এ অবৈধ নির্বাচন রুখে দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, এটি কোন নির্বাচন নয়, এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। তারা মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, বাকস্বাধীনতা হরণ করেছে, তারা আবারও মানুষকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার আরেকটি সাজানো প্রহসন বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। কিন্তু এবার আর প্রতারণার নির্বাচন করে পার পাওয়া যাবে না।
মানুষ বলছে কিসের ভোট? আমরা এই ভোট দিতে যাবো না: মান্না
৭ই জানুয়ারি ভোট বাতিল না করলে ‘জনগণ শান্ত থাকবে না, সমুচিত জবাব দেবে’ বলে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। মঙ্গলবার দুপুরে কাকরাইল মোড়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। মান্না বলেন, এটা কোনো নির্বাচন না। মানুষদের বলছি, এই ভোট দিতে যাবেন না। আমি এখানে বসে ছিলাম দেখলাম কয়েকজন রিকশাওয়ালা গেলো- সাংবাদিক ভাইয়েরা হয়ত খেয়াল করেছেন তারা কি বলতে বলতে গেছে আপনারা শুনেছেন। রিকশাওয়ালা, পান-বিড়ি দোকানদার, গ্রামে যে সমস্ত চায়ের দোকান আছে, হাট-বাজার সমস্ত জায়গায় মানুষ বলছে, কিসের ভোট? ভোট তো আগেই হয়ে যায়, এই ভোট আমরা দিতে যাবো না। সরকারের উদ্দেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, এরপর একেক করে যদি আবারো সারা দুনিয়া থেকে আপনাদের (সরকার) ওপরে চাপ আসে সহ্য করতে পারবেন? আমরা তো ওই জন্য চিন্তিত। আমরা দেশকে ভালোবাসি তাই বলি- এই ভোট বাতিল করেন, সংসদ ভেঙে দেন এবং একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করেন। জানি একথা শুনবেন না আপনারা। কিন্তু তবুও ভালো কথা বলতে তো দোষ নাই। ভালো কাজ যদি না করেন নিশ্চিত থাকতে পারেন জনগণ এরকম শান্ত থাকবে না। নিশ্চিত থাকতে পারেন আমরা যেরকম করে কেবল লিফলেট বিতরণ করছি, সভা করছি মানুষ বলবে, সব বন্ধ করে দাও, হরতাল দাও, অবরোধ দাও আবার… এই নির্বাচন আমরা যাবো না।
মান্না বলেন, নির্বাচন তো হচ্ছে না। নির্বাচনে নামে যা হচ্ছে এগুলো দেখছেন আপনারা। সরকারি দলের নেতা তারা যা কথা বলছে সেই কথাগুলো আপনারা শুনছেন। আমরা শুধু বলছি, জনগণের কল্যাণের জন্য আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন করব। সেই দাবি ছাড়ব না আন্দোলন করবো যতক্ষণ পর্যন্ত এই অবৈধ দখলদারদের সরিয়ে সেখানে বৈধ জনগণের পছন্দমতো সরকার গঠন করতে না পারি। সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি এবং ‘একতরফা’ নির্বাচন বর্জনের ডাকে গণতন্ত্রমঞ্চ কাকরাইল মোড়ে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। পরে নেতাকর্মীদের নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ শান্তিনগর-মালিবাগ সড়কে মিছিল বের করে।
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, তারা (সরকার) গুঞ্জন ছড়িয়ে দিয়েছে যে, ৭ তারিখের পরে বিএনপিকে তারা নিষিদ্ধ করতে পারেন কিনা। এরকম উদ্যোগ অতীতে যারা নিয়েছেন যারা রাজনৈতিক বিরোধীদেরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা না করে যারা প্রশাসনিক অর্ডার দিয়ে নিষিদ্ধ করতে গেছেন দুর্ভাগ্যজনকভাবে রাজনৈতিকভাবে তাদের মৃত্যু ঘটেছে। মানুষ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে, তাদেরকে বর্জন করেছে। আমি আশা করি, ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ সেই পথে হাঁটবে না। যখন আপনি অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়েন সেদিন লোকেরা বলত পাশে আরেকপা গর্ত খুঁড়ে রাখবেন কারণ এই গর্তে পরেরদিন হয়ত আপনাকেই পড়তে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনও শর্ত দিচ্ছেন যে, নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ গোটা দুনিয়া থেকেও নাকি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে লক্ষণটা আপনারা দেখছেন। বিবিসি গতকাল সংবাদ প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশ ইলেকশন হ্যাজ বিকাম এ ওয়ান উইমেন সো। দুনিয়ার বিভিন্ন গণমাধ্যম বাংলাদেশের এই নির্বাচনকে সরকার, সরকারি দলের এবং বিশেষ ব্যক্তিদের তাদের ইচ্ছা পূরণের, তাদের অবৈধ ক্ষমতা প্রলম্বিত করার তৎপরতা হিসেবে বিবেচনা করছেন। কেউ এটা জাতীয় নির্বাচন বলছেন না। ডিপ্লোমেটরা তাদের দেশে বার্তা পাঠাচ্ছে যে, বাংলাদেশে এটা নির্বাচন না, তারা বলছেন, স্পেশাল ইলেকশন অপারেশন, বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা এটাকে নির্বাচন বলার সুযোগ নেই। সেজন্য ওবায়দুল কাদের সাহেবকে (আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) বলছি, যে, খেলা আপনারা শুরু করেছে, এটা আপনাদের জন্য খেলা কিন্তু বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের জনগণের জন্য নতুন একটা বিপর্যয়, নতুন একটা বিপদ আপনারা ডেকে আনছেন। তাই বলব, এই খেলাটা বন্ধ করেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন। ৭ তারিখে যা হচ্ছে সেটা সুষ্ঠু নির্বাচন না, তামাশা, একই দলের লোকেরা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে তথাকথিত ভোটার আনার জন্য। কাজেই মানুষের এই বিষয়ে কোনো আগ্রহ নাই, মানুষ ভোট দিতে যাবে না। আমরা সরকারকে বলি, এখনো সময়ে আছে- সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী করতে পারেন পার্লামেন্ট ভেঙে দেন, সমস্ত দলকে নিয়ে আলোচনায় বসেন, সংকট সমাধান করেন, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। সেটা সকলের জন্য মঙ্গল। আর না হয় এদেশের মানুষ সংগ্রাম করতে জানে, এই দেশের মানুষ সংগ্রাম করবে, তার অধিকার ছিনিয়ে নেয়া তারা সহ্য করবে না।
নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিজুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বক্তব্য রাখেন।
আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করেছে সরকার বিরোধী আইনজীবীরা
দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট ও জজ কোর্টসহ দেশের সব আদালতে বর্জন কর্মসূচি পালন করেছে সরকারবিরোধী আইনজীবীরা। মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সামনে বিএনপিপন্থি ও সরকারবিরোধী আইনজীবীরা অবস্থান নিয়ে আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করেছেন। এ সময় আন্দোলনকারীরা আইনজীবীদের মাঝে আদালত বর্জনের লিফলেট বিতরণ করেছেন। পরে তারা সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এ বিষয়ে বিএনপি’র আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, আমরা সকাল ৯টা থেকে আদালত বর্জন কর্মসূচি শুরু করেছি। সারা দেশে বিচারের নামে যে অবিচার-প্রহসন হচ্ছে তার প্রতিবাদে। দেশের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারের নামে যে অবিচার হচ্ছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অন্যায়ভাবে সাজা দেয়া হয়েছে। তারেক রহমানকেও সাজা দেয়া হয়েছে। সোমবার নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও সাজা দেয়া হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিরোধী দলের নেতাদের প্রহসনের বিচারের নামে সাজা দেয়া হচ্ছে। এসব অন্যায়ের প্রতিবাদে আমরা সারা দেশে আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করছি।
গত ২৭শে ডিসেম্বর এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। ১ থেকে ৭ই জানুয়ারি আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগসহ সারা দেশে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন তারা। পরবর্তীতে ৩১শে ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে একই কর্মসূচির ঘোষণা দেয় জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত আইনজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল।