তথ্যসচিব মো: মকবুল হোসেনকে বাধ্যতামূলক অবসরের নামে চাকুরিচ্যুতির ঘটনাটি ছিল সোমবার টক অব দ্যা সচিবালয়। বড় আমলা থেকে পিয়ন সবার মুখেই এই বিষয়টি আলোচনা করতে শোনা গেছে। চাকুরির বয়স আরো এক বছর থাকতেই তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। হঠাৎ করেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত ঘটনা ঘটেছে মো: মকবুল হোসেনের জন্য। যদিও এই আমলারাই ভোট চুরি ও শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ কায়েমে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন।
এদিকে চাকুরিচ্যুত তথ্যসচিব নিজেও সাংবাদিকদের কাছে দাবী করেছেন ছাত্র জীবনে ছিলেন ছাত্রলীগ। ভাই করেন আওয়ামী লীগ। বলেছেন, সৃষ্টিকর্তাকে যেভাবে স্মরণ করি, বঙ্গবন্ধুকেও সেভাবে স্মরণ করি। কিন্তু তারপরও রেহাই মিলেনি।
শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে এই আমলারাই বিদ্রোহ করে তথাকথিত জনতার মঞ্চে উঠেছিলেন। ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে লিফটে একজন পিয়নের গায়ে ধাক্কা লাগার অজুহাতে সচিবরা মিছিল করে বের হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে তথাকথিত জনতার মঞ্চে গিয়ে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছিলেন। এই আমলারাই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের নামে তামাশায় সরকারের মূল সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করেছেন। ফ্যাসিবাদ ও সরকারি দলের লুটপাট টিকিয়ে রাখতে এই আমলারাই সহযোগিতা করছেন। এখন তাদের গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিলে বা মাঠে ময়দানে চর-থাপ্পড় দিলেও গায়ে লাগে না। সোমবার (১৭ অক্টোবর) বরিশালে আওয়ামী মেয়র একজন ইউএনওকে যেভাবে ধমক দিয়েছেন, স্টুপিড বলে শাসিয়েছেন তাতেও আমলাদের কিছু যায় আসে না
সচিবালয়ে অনেকেই বলাবলি করছেন, তথ্য সচিবকে চাকুরিচ্যুতির মাধ্যমে সরকার সরকারি আমলাদের কঠিন বার্তা দিচ্ছে। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারি আমলাদের বিষয়ে আরো কঠোর হতে পারে সরকার এমনটাই বলাবলি করছেন সবাই। যদিও এই আমলারাই ভোট ডাকাতির অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছে।
মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই অবসরে পাঠানো তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেন সোমবার (১৭ অক্টোবর) তাঁর দফতরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন অশ্রুসজল চোখে।
বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি জানি না আমাকে কেন অবসরে পাঠানো হলো। মানুষকে ফাঁসি দিলেও তো একটা ট্রায়াল হয়। কিন্তু আমি জানি না কোন কারণে এই সিদ্ধান্ত।
লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের অভিযোগে এমন শাস্তি দেয়া হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারেক রহমানের সাথে জীবনে কখনো সামনা-সামনি দেখা হয়নি। আমরা লন্ডনে গিয়েছিলাম মার্চে, একটা টিম নিয়ে। আমাদের প্রেসের দায়িত্বে আছেন আশিকুন্নবি। তার কাছে জিজ্ঞাসা করলে পরিষ্কারভাবে বিষয়টি জানা যাবে।
সরকার যে আদেশ দিয়েছে, তা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী অবসর দেয়া হয়েছে। যতদিন এখানে কাজ করেছি, সততার সঙ্গে কাজ করেছি। আমি পারবারিকভাবে বর্তমান সরকারের মতাদর্শের। সে অনুযায়ী সরকারকে সহায়তা করেছি। অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই। এটা খতিয়ে দেখতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি করেছি, তখন হলে ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলাম। সৃষ্টিকর্তাকে যেভাবে স্মরণ করি, বঙ্গবন্ধুকেও সেভাবে স্মরণ করি। প্রবাদে আছে, হাতি যখন কাদায় পড়ে, চামচিকাও লাথি মারে। আমি মার্চে লন্ডন গিয়েছিলাম। এই অভিযোগের বিষয়টি সত্য হলেও সেটা তো মার্চ মাসে হয়েছে। আজ তো অক্টোবর। এতদিন এই প্রশ্ন আসেনি কেন? আমি তারেক রহমানকে কোনোদিন দেখেছি বলে মনে পড়ে না এবং তারেক রহমানকে দেখার ইচ্ছাও আমার নেই।
তার চাকরির মেয়াদে বিএনপি সরকারের আমলেও তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা হয়নি? এমন প্রশ্নের জবাবে মকবুল বলেন, সামনা-সামনি তাদের দেখা হয়নি। তিনি তো মন্ত্রীও ছিলেন না, এমপিও ছিলেন না। টেলিভিশনে তাকে দেখেছি, সেটা তো স্বাভাবিক।’
অভিযোগের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আপনাদের তো জানার অনেক পথ আছে। এ ধরনের কোনো বিষয় যদি আপনাদের নলেজে আসে এবং সেটা যদি বস্তুনিষ্ঠ হয়, অবশ্যই তা পত্রিকায় প্রকাশ করবেন। আমি বাংলাদেশের যেখানেই থাকি আমাকে এই প্রশ্ন করবেন যে আপনি লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করেছেন কি না, অমুক জায়গায় বিএনপির লোকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কি না বা আপনার সংযোগ বিএনপির সঙ্গে আছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু আজ বা কাল নয়, কোনো সময় যদি এমন কোনো সংযোগ আমার সঙ্গে পান, আমাকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন।
নিজের কাজের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আপনারা তথ্য সংগ্রহ করেন, আমি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম কি না। দুর্নীতি ২ রকমের। একটা আর্থিক দুর্নীতি, আরেকটা ইন্টেলেকচুয়াল দুর্নীতি। আপনারা প্রতিদিন এখানে আসবেন। আমি ইন্টেলেকচুয়াল ও আর্থিকভাবে কতটা স্বচ্ছ ছিলাম, কতটা অস্বচ্ছ ছিলাম, তা জানতে পারবেন।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজমের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মো. মকবুল হোসেনকে সরকারি চাকরি আইন-২০১৮ এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী জনস্বার্থে অবসর প্রদান করা হলো।





