বিভাস ভট্টাচার্য: প্রার্থী মুসলিম। তাতে কী? সে তো ঘরেরই ছেলে। তাই বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর মঙ্গল কামনায় এগিয়ে এলেন এলাকার হিন্দুরা। আয়োজন করলেন এক বড়সড় যজ্ঞের। শুক্রবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক বড় উদাহরণ হয়ে থাকল হুগলির খানাকুল। এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মুন্সি নজবুল করিমের জয়ের প্রার্থনায় এদিন সকাল থেকেই এক বিরাট মঙ্গল যজ্ঞের আয়োজন করেন ভারতীয় সনাতন ব্রাহ্মণ সমন্বয় ট্রাস্ট-এর এলাকার সদস্যরা। যোগ দেন ১০০ জন ব্রাহ্মণ। যা শুনে আপ্লুত প্রার্থী নজবুল বললেন, ‘এটাই ভারত। এটাই আমাদের আসল সংস্কৃতি।’
এদিন সকাল থেকেই সাজসাজ রব পড়ে যায় খানাকুলের রাজহাটি সিনেমাতলার মাঠে। টাঙানো হয় সামিয়ানা। আসে বিপুল পরিমাণ কাঠ। ধুতি চাদরে শোভিত হয়ে আসেন ব্রাক্ষণরা। যজ্ঞ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সকলেরই আজ উপবাস। কত কাঠ এল? ট্রাস্টের সম্পাদক সুরজিত্ চক্রবর্তী জানালেন, ‘এক কুইন্টাল কাঠ এনেছি। সম্পূর্ণ নিজেদের খরচায়।’
কেন এই উদ্যোগ? সুরজিত্ বলেন, ‘অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন হিন্দু হয়ে আমরা কেন মুসলিম প্রার্থীকে জেতাতে এত তোড়জোড় করছি। আসল কথা হল নজবুল আমাদের এলাকার ছেলে। সকলেই ওঁকে ভালোবাসি। সেজন্যই ঈশ্বরের কাছে ওঁর জয়ের কামনায় এই যজ্ঞের আয়োজন করেছি’। কিন্তু এলাকার অন্য প্রার্থীরাও তো ঘরের ছেলে। তাঁদের জন্য তো করছেন না! সুরজিত্ বলেন, তৃণমূল সরকার আমাদের পুরোহিতদের ভাতার বন্দোবস্ত করেছে। আমরা এর জন্য উপকৃত। তাই আমরা ঠিক করেছি এই দলের পাশেই থাকব। সেই কারণেই নন্দীগ্রামে আমাদের সমস্ত সদস্যদের কাছে আমরা মমতা ব্যানার্জির পক্ষে যেমন ভোট দিতে বলেছিলাম তেমনি রাজ্যের বাকি জায়গাতেও তৃণমূলকে সমর্থন করতে আমাদের সংগঠনের সদস্যদের অনুরোধ জানিয়েছি। আর নজবুল তো খুবই আপনজন।
অথচ নজবুল নিজেই প্রথমে জানতেন না এই আয়োজনের কথা। তাঁর কথায়, ‘আমি পরে শুনেছি। যেহেতু প্রচারে ব্যস্ত আছি তাই যজ্ঞের জায়গায় যেতেও পারিনি। দূর থেকেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছি। আসলে আমি নিজেও কোনদিন এই জাতি ধর্মের ভেদাভেদ করিনি, করবও না। কারণ, আমরা সকলে একটাই জাত, মানুষ।