- অর্থ দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্যের সমস্ত সরকারি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত জেলাস্তরের তথ্যও এখন থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে নথিভুক্ত করতে হবে।
পশ্চিমবঙ্গ নিউজ ডেস্ক: রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিল নবান্ন। এ বার থেকে কর্মচারীরা সহজ প্রক্রিয়ায় তাঁদের বেতন-সংক্রান্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বদল করতে পারবেন। সম্প্রতি রাজ্য অর্থ দফতরের তরফে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনও কর্মচারী যদি নিজের বেতন গ্রহণের জন্য ব্যবহৃত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করতে চান, তবে তাঁকে নির্দিষ্ট ‘অপশন ফর্ম’ পূরণ করে সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রধান বা অফিস প্রধানের কাছে জমা দিতে হবে। ফর্ম জমা দেওয়ার পর প্রশাসনিক অনুমোদনের ভিত্তিতে নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে বেতন তুলতে পারবেন কর্মী। এই পদক্ষেপে দীর্ঘদিনের জটিলতা ও প্রশাসনিক দেরি অনেকটাই কমবে বলে আশা করছে সরকারি কর্মচারীমহল।
এ ছাড়াও অর্থ দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্যের সমস্ত সরকারি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত জেলাস্তরের তথ্যও এখন থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে নথিভুক্ত করতে হবে। ব্লক পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসন পর্যন্ত সমস্ত দফতরকে তাদের অধীনস্থ সরকারি অ্যাকাউন্টের তথ্য আপলোড করতে বলা হয়েছে। এর জন্য একটি নতুন অনলাইন মডিউল চালু করেছে রাজ্য সরকার। নবান্নের দাবি, এর ফলে সরকারি অর্থ ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আরও স্পষ্ট হবে।
রাজ্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনগুলির মতে, এই উদ্যোগ অত্যন্ত সময়োপযোগী। আগে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বদল করতে হলে বিভিন্ন স্তরের অনুমোদন ও কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় মাসের পর মাস লেগে যেত। এখন সহজ ‘অপশন ফর্ম’-এর মাধ্যমে কর্মচারীরা নিজের পছন্দের ব্যাঙ্কে বেতন নিতে পারবেন। সরকারি সূত্রে খবর, শীঘ্রই এই প্রক্রিয়া সম্পর্কিত সমস্ত বিস্তারিত নির্দেশ জেলা ও ব্লক পর্যায়ের অফিসগুলিতে পৌঁছে দেওয়া হবে। নবান্নের আশা, এর ফলে শুধু কর্মচারীরা নয়, প্রশাসনিক ব্যবস্থাও উপকৃত হবে এবং সরকারি অর্থনীতিতে আরও শৃঙ্খলতা আসবে।
রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে স্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যা আড়াই লক্ষের কিছু বেশি। সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত, অনুমোদিত এবং সরকারপোষিত স্কুলশিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ ৮০ হাজার। পঞ্চায়েত, পুরসভা, পুরনিগম এবং সরকারপোষিত স্বশাসিত সংস্থায় কর্মরত কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ। সব মিলিয়ে প্রায় সাত লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি। এই বিরাট সংখ্যায় সরকারি কর্মচারীরা এই নতুন নিয়মের সুবিধা পাবেন।
এই দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন সরব ছিলেন তৃণমূল কর্মচারী ফেডারেশনের প্রাক্তন সভাপতি মনোজ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে এমন সুযোগ সুবিধার দাবি করে আসছিলাম। আমি হয়ত সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। যাঁরা এখন চাকরি করছেন বা আগামী দিনে সরকারি চাকরি করবেন, এই পদক্ষেপে তাঁদের জন্য নতুন সুবিধার পথ খুলে গেল।’’ পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিজন সরকার বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার যখন কোনও নীতি প্রণয়ন করে তখন সেই নীতি শিক্ষা দফতরের জন্যও কার্যকরী হয়। তাই আমাদের মতো শিক্ষকেরাও সুবিধা পাবেন, যাঁরা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে বদলি হয়েছেন, বা কেউ কোনও সমস্যার জন্য ব্যাঙ্ক পরিবর্তন করতে চাইছেন, তাঁরাও এই সুযোগ পাবেন। তাই আমরা রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীকে এই সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’