আরাকান নিউজ ডেস্ক: সেনাবাহিনীতে জোরপূর্বক নিয়োগের জন্য সরকারি চাকরিজীবীদের তালিকা করছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এরই মধ্যে ইয়াঙ্গুন ও নেপিদোর সব সরকারি বিভাগকে ‘উপযুক্ত কর্মীদের’ তালিকা জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফাঁস হওয়া এ-সংক্রান্ত বেশকিছু নথি ও সরকারি চাকরিজীবীদের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ইরাবতী।
সাম্প্রতিক সংঘাতে বিদ্রোহীদের কাছে পরাস্ত হয়ে বহু সেনাঘাঁটি হারিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। এমনকি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সদস্যদের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে সেনাদের প্রতিবেশী দেশগুলোয় আশ্রয় নেয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সৈন্য সংকট পূরণে সামরিক বাহিনীতে জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৮ থেকে ৩৫ বছরের সব পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছরের সব নারীকে বাধ্যতামূলকভাবে দুই বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করতে হবে। আর বয়স ৪৫ বছরের মধ্যে; এমন পুরুষ চিকিৎসক ও প্রকৌশলীদের অবশ্যই সেনাবাহিনীতে তিন বছর থাকতে হবে। নারীদের ক্ষেত্রে এ বয়সসীমা ৩৫ বছর। চলমান রাষ্ট্রীয় জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় এ নিয়োগ পাঁচ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে। ২০১০ সালের এক আইন অনুযায়ী এ পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে সেনাবাহিনীতে যোগদানের আদেশ অমান্য করলে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আইনটি এতদিন কার্যকর ছিল না।
ফাঁস হওয়া ইয়াঙ্গুন আঞ্চলিক সরকারের জারি করা এক নথির বরাত দিয়ে ইরাবতী জানিয়েছে, সেখানকার সব সরকারি বিভাগকে ১৮ থেকে ৩৫ বছরের পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছরের নারী কর্মীদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রাসঙ্গিক সব বিবরণসহ এ তালিকার হার্ড ও সফট কপি গতকালের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়ার কথা ছিল।
ইয়াঙ্গুনের একটি কাস্টমস অফিসে কর্মরত ২৬ বছরের এক নারী ইরাবতীকে বলেন, ‘প্রতিটি বিভাগের প্রধানরা আমাদের মধ্যে যারা “সেবা করার যোগ্য” বয়সসীমার মধ্যে রয়েছেন, তাদের তথ্য সংগ্রহ করে আঞ্চলিক সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন।’ তিনি জানান, কাদের নিয়োগ দেয়া হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে খসড়া তৈরির দায়িত্বে থাকা জাতীয় কমিটি। সরকারি চাকরিজীবীদের নিয়োগও অন্য নাগরিকদের মতো একই সময়ে শুরু হবে। নেপিদোর সরকারি চাকরিজীবীরা জানিয়েছেন, সেখানেও একই রকমের নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে।
ইয়াঙ্গুনে জান্তা বাহিনীতে কাজ করার জন্য যোগ্য বাসিন্দাদের তালিকা তৈরি করছে ওয়ার্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিটি। দক্ষিণ দাগন এলাকার বাসিন্দা ৫৭ বছরের বিধবা নারী ডাও আই জানান, তার ছেলে জান্তা বাহিনীতে নিয়োগের জন্য নির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে পড়েছে। কিন্তু তিনি জানেন না, পুত্রকে এমন বাধ্যতামূলক নিয়োগ দেয়া হলে কে তার সেবাযত্ন করবে। ডাও আইয়ের ভাষায়, ‘আমার ছেলের বয়স ২৭ বছর। সে কঠোর পরিশ্রম করে এবং আমাকে ভালোভাবে দেখাশোনা করে।’ তরুণদের সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে আর রাতে ঘুমাতে পারছেন না এ নারী। তার চিন্তা, তালিকায় কখন ছেলের নাম ঢুকে যায়।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশটির সশস্ত্র বিদ্রাহী গোষ্ঠীগুলো নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে জান্তা সরকারের দমননীতি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। বিদ্রোহীদের হাতে একের পর এক এলাকার নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে সরকারি বাহিনী। রাখাইনের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে কয়েক দশক ধরে লড়াই করে আসা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দাবি, তাদের সঙ্গে টিকতে না পেরে সম্প্রতি বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে জান্তা সরকার। কাচিন রাজ্যেও বিদ্রোহীরা চীন সীমান্তবর্তী সামরিক ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।