- অভিজ্ঞ তদন্তকারী দল তদন্ত করছে
- লুৎফুর রহমানের কাউন্সিল পরিচালনা পর্যালোচনা চলছে
কমিউনিটি নিউজ ডেস্ক: টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের বহুল আলোচিত মেয়র লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল সরকারের কড়া নজরদারিতে পড়েছে। কাউন্সিলের সকল কার্যক্রম পরিচালনা পর্যালোচনা করার জন্য সরকার লণ্ডন বরোর প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী কিম ব্রমলি-ডেরি’র নেতৃত্বে একটি অভিজ্ঞ তদন্তকারী দল প্রেরণ করেছে। তদন্তকারী দলকে কাউন্সিলের বাজেট, আর্থিক পরিকল্পনা, সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট পদে নিয়োগ, স্থানীয় সরকারের জন্য প্রত্যাশিত সেবার মান, উপদেষ্টাদের ব্যবহার নীতি এবং কাউন্সিলের অনুদান প্রদানের নীতি ও অনুশীলন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তদন্তকারী দল তদন্ত করছে, লুৎফুর রহমানের কাউন্সিল পরিচালনা পর্যালোচনা চলছে।
এ নিয়ে ২২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ”Tower Hamlets: Running of council under Lutfur Rahman under review” শিরোনামে বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিবিসি’র পলিটিক্যাল এডিটর ‘টিম ডোনোভান’ এর করা সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্বতন্ত্র মেয়র লুৎফুর রহমানের অধীনে কীভাবে কাউন্সিল পরিচালিত হচ্ছে তা নিয়ে উদ্বেগের পরে সরকারী পরিদর্শকদের পাঠানো হয়েছে। কাউন্সিলে সিনিয়রদের নিয়োগসহ এর অর্থ কীভাবে ব্যয় করা হয় ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় পরিদর্শকদের দেখতে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লুৎফুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কাউন্সিলের শীর্ষ কর্মকর্তারা যেভাবে মনোযোগ আকর্ষণ ও দোহন করছেন তাতে করে কাউন্সিলের ‘ডিপার্টমেন্ট অব লেভেলিং আপ, হাউজিং অ্যান্ড’ কমিউনিটি (ডিএলইউএইচসি) অফিশিয়ালরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
সম্প্রতি কাউন্সিলের একজন মনিটরিং অফিসার চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া বর্তমানে কাউন্সিলে কভারিং চিলড্রেন সার্ভিসেস, কমিউনিটি, হাউজিং ও রিজেনারেশন এই তিনটি সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট রোলের জন্য শূন্যপদ রয়েছে। কাউন্সিল চারটি পরিচালকের পদও পূরণ করতে চাইছে।
তদন্তকারী দলের প্রধান কিম ব্রমলি-ডেরি’র কাছে লেখা একটি চিঠিতে একজন (ডিএলইউএইচসি) কর্মকর্তা বলেছেন যে তারা কর্তৃপক্ষের “বেস্ট ভ্যালু ডিউটি” মেনে চলার ক্ষমতা নিয়ে “উদ্বিগ্ন”। ২০১৪ সালে যারা দুর্নীতিগ্রস্ত বলে সাব্যস্ত হয়েছিলেন এবং “বেস্ট ভ্যালু ডিউটি” মানতে ব্যর্থ হয়েছিলেন মেয়রের নিয়োগকৃত সেই উপদেষ্টারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কাউন্সিল অফিসারদের সাইড লাইনে ঠেলে দিয়ে “একটি ‘দ্বৈত কাউন্সিল’-এর ঝুঁকি তৈরি করেছেন। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, আগে যে কারণে লুৎফুর রহমানকে পাঁচ বছরের জন্য অফিস থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সেই একই কারণ পুনরায় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক দশক আগে ২০১৪ সালে একবার পর্যালোচনা করা হয়েছিল। যার ফলে টাওয়ার হ্যামলেট পরিচালনার জন্য সরকার-নিযুক্ত কমিশনারদের পাঠানো হয়েছিল।
সরকার কিম ব্রমলি-ডেরি’র নেতৃত্বেধীন পরিদর্শকদের “নির্বাচনের জন্য সম্পদের ব্যবহার এবং রিটার্নিং অফিসারের স্বাধীনতা রক্ষণাবেক্ষণ এবং টাওয়ার হ্যামলেটস হোমস এবং বাড়িতে অবসর পরিষেবার মতো পরিষেবাগুলি আনার ব্যবস্থা” দেখতে বলেছে।
সংবাদের প্রতিক্রিয়ায়, টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার কাউন্সিলর মার্ক ফ্রান্সিস বলেছেন, “বিরোধী কাউন্সিলর হিসাবে আমাদের কাছে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে মেয়র লুৎফুর রহমান এবং তার ‘অ্যাসপায়ার পার্টি’র কাউন্সিলরদের অধীনে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে সিভিল সার্ভিস কর্মচারীরা দ্রুত অবনতিশীল শাসনব্যবস্থা এবং অপব্যয় ব্যয় দেখেছেন। ফলে সরকার এই পর্যালোচনার আদেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন,”সাম্প্রতিক লোকাল গভর্নমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (এলজিএ) পিয়ার রিভিউ দ্বারা কঠোর সমালোচনার পরে আসন্ন দু: খজনক ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ নিয়ে বিতর্ক করাসহ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করেছি। কিন্তু মেয়র এবং তাঁর দলীয় কাউন্সিলররা এই সুপারিশগুলি গ্রহণ করেনি এবং তাঁরা তাদের পথ পরিবর্তন করেনি।”
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “আমরা এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত, তবে এটি অবশ্যই সরকারের বিশেষাধিকার এবং আমরা আমাদের কাজে আত্মবিশ্বাসী এবং সম্পূর্ণভাবে সহযোগিতা করব। তিনি আরও বলেন, “লোকাল গভর্নমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন পিয়ার রিভিউ এবং ইনভেস্টর ইন পিপল দ্বারা সাম্প্রতিক স্বাধীন পর্যালোচনায় আমাদের কাজ প্রশংসিত হয়েছে৷ যদিও উভয় পর্যালোচনাই ইতিবাচক ছিল, আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের কাউন্সিলের সংস্কৃতির মতো আরও উন্নতির জন্য তাদের সুপারিশগুলি পূরণ করার জন্য কর্ম পরিকল্পনা প্রদান করছি৷”
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান সরকারের এই সিদ্বান্তকে অত্যন্ত হতাশাজনক বললেও তদন্তকারী দলকে তিনি সব ধরণের সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন,”পরিদর্শনের ফলাফলে আমি আত্মবিশ্বাসী। ব্যক্তিগতভাবে, আমি আমাদের বারার বাসিন্দাদের উপর প্রথম এবং সর্বাগ্রে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি। টাওয়ার হ্যামলেটস হল লণ্ডনের সবচেয়ে দরিদ্র এবং সবচেয়ে জনাকীর্ণ বরোগুলির মধ্যে একটি। আমরা অব্যাহতভাবে কাউন্সিলের যে সেবা এবং পরিষেবাগুলি বারার বাসিন্দাদের দিচ্ছি তাঁরা সেগুলো পাবার যোগ্য। আমাদের বাসিন্দারারা সেগুলো ডিজার্ভ করে। আমরা তদন্ত প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ সহযোগিতা করব। আমি নিশ্চিত যে ফলাফলটি ইতিবাচক হবে।”