ঢাকা, ২৯ আগস্ট- নেপালের ললিতপুরের আনফা কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশীপের ফাইনালে মিরাজুল ইসলামের জোড়া গোলে স্বাগতিক নেপালকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। অন্য গোল দুটি করেন রাব্বি হোসেন রাহুল ও পিয়াস আহমেদ নোভা। নেপালের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন সামির তামাং। এর আগে তিনবার ফাইনালে উঠলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। যুব সাফে এটা বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা। এর আগে এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেললেও শিরোপার স্বাদ পায়নি।
সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ আসরের ফাইনালে ভারতের কাছে অতিরিক্ত সময়ে ৫-২ গোলে হেরে রানার্স-আপ হয়েছিল। এবার সেই ভারতকে সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে ফাইনালে আসে বাংলাদেশ। আর গ্রুপপর্বে স্বাগতিক নেপালের কাছে হারলেও তাদের হারিয়েই প্রথম শিরোপা শোকেসে তোলে রাব্বি-আসাদুল-মিরাজুলরা।
ফাইনালে প্রথম গোলের দেখা পেতে ৪৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় বাংলাদেশকে। ৪৫+১ মিনিটের মাথায় প্রথম গোল করেন মিরাজুল। এ সময় ডি বক্সের সামনে ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। আর ফ্রি কিক থেকে সরাসরি গোল করেন মিরাজুল। তাতে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ওই মিরাজুলের গোলে শিরোপার গন্ধ পেতে শুরু করে বাংলাদেশ যুবা দল। ৫৫ মিনিটে ব্যবধান ২-০ করেন তিনি।
এরপর রাব্বির গোলে ব্যবধান ৩-০ হয়। ম্যাচের ৭০ মিনিটে গোল করেন তিনি। তবে পরেই এক গোল হজম করে বসেন গোলরক্ষক আসিফ হোসেন। তাতে অবশ্য বড় জয় আটকায়নি। ম্যাচে ১০ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়। শেষ বাঁশির আগে আরও এক গোল করে বড় জয় নিয়েই শিরোপার উচ্ছ্বাসে মেতেছেন কোচ মারুফুল হকের দল। শেষ গোলটি করেন পিয়াস আহমেদ নোভা।
ম্যাচের শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। স্বাগতিক দর্শকদের আনন্দে মাতার তেমন কোনও সুযোগই দেননি কোচ মারুফুল হকের শিষ্যরা। যদিও ম্যাচের ২০তম মিনিটে দারুণ গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল নেপাল। সতীর্থের পাস থেক বল পান নিরাজন ধামি। চার ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ফাঁকায় থাকা নিরাজ কারকিকে পাস দেন তিনি। শুধু লক্ষ্যে শট নিতে পারলেই এগিয়ে যেতে পারত নেপাল। তবে তার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
তিন মিনিট পরে এগিয়ে যেতে পারত বাংলাদেশও। ২৩তম মিনিটে বক্সের ডান প্রান্তে ফ্রি-কিক পায় বাংলাদেশ। রাব্বি হোসেন রাহুলের ফ্রি-কিক থেকে উড়ে আসা বলে দুখু মিয়ার হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে মিরাজুলের গোলে লিড নেয় বাংলাদেশ। ইনজুরি টাইমে বক্সের বাইরে মিরাজুল ইসলামকে ফাউল করে বসেন নেপালের এক ডিফেন্ডার। সঙ্গে সঙ্গে রেফারি ফ্রি কিকের বাঁশি বাজান। মিরাজুলের দুর্দান্ত বাঁকানো শটে নেপালি গোলরক্ষক সম্পূর্ণ পরাস্ত হন। সাইড পোস্টে লেগে বল জালে জড়ায়। বাংলাদেশের গোলের সঙ্গে সঙ্গে আনফা কমপ্লেক্সের গ্যালারিতে নিস্তব্ধতা ভর করে।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার বাড়ায় বাংলাদেশ। যার ধারবাহিকতায় দ্বিতীয়ার্ধের সপ্তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে মিরাজুলরা। বাঁ প্রান্ত থেকে আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। বক্সের ভেতর সতীর্থের বাড়ানো ক্রসে বল পার করেন মিরাজুল। পোস্টের সামনে ফাঁকায় থেকে হেডে বল জালে জড়ান তিনি।
ম্যাচে দুই গোল হজম করে খেই হারিয়ে ফেলে নেপাল। সেই সুযোগে তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে খেলতে থাকা বাংলাদেশ ৭০তম মিনিটে ব্যবধান ৩-০ তে নিয়ে যায়। দলের তৃতীয় গোলটি আসে রাহুলের কাছ থেকে। এই গোলেও ছিল মিরাজুলের অবদান। তার যোগান দেয়া বলেই গোল করেন রাহুল।
৮১তম মিনিটে বাংলাদেশের রক্ষণ আর গোলরক্ষকের ভুলে ব্যবধান কমায় স্বাগতিক নেপাল (৩-১)। তবে ইনজুরি সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে এক হালি পূরণ করে বাংলাদেশ। বাঁ দিক থেকে রাব্বি হোসেন রাহুলের ক্রসে পিয়াশ আহমেদ নোভা গোল করে ব্যবধান ৪-১ করেন। বিজয় উল্লাসে মাতে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা।
এর আগে এই নেপালের কাছেই গ্রুপ পর্বে ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। গ্রুপপর্বের হারের প্রতিশোধ ফাইনালে শিরোপা জয় দিয়ে উদযাপন করলেন মিরাজুল-রাব্বিরা। সাউথ এশিয়ান গেমস ফুটবলে প্রথম স্বর্ণ, মেয়েদের সাফের একমাত্র শিরোপার পর এবার নেপালের মাটিতে অনূর্ধ্ব-২০ সাফে চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ।