নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা, গ্রাম-শহরের শ্রমজীবী মানুষকে স্বল্পমূল্যে রেশন দেওয়া এবং অবৈধ ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
আজ সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানী ঢাকার পল্টন মোড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এসব দাবি জানানো হয়।
নেতারা বলেন, সারা দেশে বাজারে আগুন জ্বলছে। চাল-ডাল-সবজি, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন থেকে শুরু করে সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া। দেশের বিপুল অংশের শ্রমজীবী মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। গোটা বাজার আজ গুটিকয়েক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। আবার সরকারের মন্ত্রীদের নানা বক্তব্য এই ব্যবসায়ীদের লুটপাটের ক্ষেত্রকে আরও শক্তিশালী করছে।
নেতারা অবিলম্বে সারা দেশে গ্রাম-শহরের শ্রমজীবী মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে রেশন দেওয়ার দাবি জানান।
বাম জোট নের্তৃবৃন্দ বলেন, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে সীমাহীন দুর্নীতি-লুটপাটের দায় জনগণের কাঁধে চাপিয়ে দিতে দফায় দফায় দাম বৃদ্ধি করছে, ব্যবসায়ীরা সরকারের প্রশ্রয়ে খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে, শিক্ষা চিকিৎসার খরচও আকাশছোঁয়া, শ্রমিকদের মজুরি বাড়ছে না, কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের মৃত্যু ঘটছে, ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না, কর্মস্থলে নিরাপত্তা নাই, প্রতিনিয়ত শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ, কৃষকরা ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না অথচ সার, কিটনাশক, বীজ, সেচের খরচ দফায় দফায় বাড়ছে। দেশের বাইরে টাকা পাচারের চাঞ্চল্যকর খবর প্রকাশ পাচ্ছে কিন্তু অভিযুক্তরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। টাকা পাচার, ব্যয়বহুল মেগা প্রকল্প, আর দুর্নীতির কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে আর তার দায় চাপানো হচ্ছে জনগণের কাঁধে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলে নানা বাহবা নেওয়া হলেও আজ সারা দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং এ জনজীবন দুর্বিসহ। বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাচাঁমাল নেই।
এই রকম এক দুর্বিসহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ দিনাতিপাত করছে বলে মন্তব্য করেন বাম জোটের নেতারা।
এই পরিস্থিতি বদলাতে ব্যবসায়ী তোষণকারী ফ্যাসিবাদী এই সরকারকে উচ্ছেদের লক্ষ্যে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান বাম জোট নেতৃবৃন্দ।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, মুনাফাখোর ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ এবং ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসানের দাবিতে বাম জোট, বাংলাদেশ জাসদ ও ঐক্য ন্যাপ যুগপথভাবে এই কর্মসূচি পালন করে।
বাম জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিবির সভাপতি মো. শাহ আলম, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুস সাত্তার, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্ক্সবাদী)-এর নেতা মাসস নন্দী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।
সমাবেশ পরিচালনা করেন বাসদ কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য খালেকুজ্জামান লিপন।
এ ছাড়া সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহীন হোসেন প্রিন্স, সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বাসদের কেন্দ্রীয় সদস্য জুলফিকার আলী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহীদুল ইসলাম সবুজ। সমাবেশে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য ন্যাপের প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম এ সবুর।