বেঁচে থাক বাংলা। বেঁচে থাক বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি। দীর্ঘ লকডাউনে ধুঁকতে থাকা গ্রাম বাংলার হস্তশিল্পীদের হাল ফেরাতে নতুন উদ্যোগ শহর কলকাতায়। করোনা আতঙ্ক আর লকডাউনের জেরে গ্রামীণ অর্থনীতির হাল বেহাল। রোজগার প্রায় নেই বললেই চলে হস্তশিল্পীদের। গ্রামের তাঁতিদের হাতে বোনা কাঁথাস্টিচ, হ্যান্ডলুমের শাড়ি এবার শহরের মুখ দেখেনি। লকডাউনের জেরে হস্তশিল্পীদের হাতে গড়া মুখোশ, ডোকরা, বেত-কাঠের হরেক সামগ্রী শহরের দোকানে অমিল। রোজগারের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পেটে টান পড়েছে গ্রাম বাংলার শিল্পীদের। এমন অবস্থায় গ্রামীণ অর্থনীতির হাল ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। আজ গান্ধীজির জন্মদিনের দিনেই ঢাকুরিয়ার সৃষ্টিশ্রী প্রাঙ্গণে হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধন করেছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মেলা চলবে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা তাঁদের সেরা কীর্তি নিয়ে এদিন হাজির হয়েছিলেন ‘সৃষ্টিশ্রী’ মেলায়। এই মেলার উদ্বোধন করেন সুব্রতবাবু। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব এমভি রাও, আনন্দধারা প্রকল্পের মুখ্যনির্বাহী আধিকারিক সৌম্যজিত্ দাস, আনন্দধারা প্রকল্পের অতিরিক্ত মুখ্যনির্বাহী আধিকারিক অঞ্জন চক্রবর্তী ও অন্যান্যরা।
সৃষ্টিশ্রী-র পথ চলা শুরু হয়েছে গত বছর। গ্রামীণ হস্তশিল্পের প্রসারের জন্য কলকাতায় হস্তশিল্প নির্মাণ কেন্দ্রের পরিকল্পনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় দক্ষিণাপণের পাশের একটি ফাঁকা জমিতে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, বাংলার হস্তশিল্পের প্রচার ও প্রসারের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশও এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। ‘সৃষ্টিশ্রী’ প্রকল্পের নামকরণ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের আনন্দধারা প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন পঞ্চায়েতের যে সমস্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠীরা কাজ করে তাদের তৈরি শিল্প সামগ্রী বিক্রি শুরু হয় সৃষ্টিশ্রী-তে। পুজোর আগে থেকেই শুরু হয়েছিল তোড়জোড়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে হস্তশিল্পীরা তাদের শিল্পের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এখানে। কিন্তু করোনা আতঙ্কের কারণে এ বছর সেই সুযোগ হয়নি গ্রাম বাংলার শিল্পীদের। তাই রাজ্য সরকারের উদ্যোগেই সৃষ্টিশ্রী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
সৃষ্টিশ্রী মেলার উদ্বোধন করে সুব্রতবাবু বলেছেন, ‘গত বছর পুজোয় এই সৃষ্টিশ্রী হাবের সূচনা হয়েছিল। এবারে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যেরা তাঁদের হাতে তৈরি সুন্দর সুন্দর জিনিস নিয়ে এসে বিক্রি করছেন। কম দামে এমন গুণমানের জিনিস আর কোথাও পাবেন না।’ দুপুর ২টো থেকে রাত আটটা অবধি খোলা থাকবে মেলা। প্রতিটি জেলার স্বনির্ভর গোষ্ঠী তাদের নিজস্ব স্টল তৈরি করেছে মেলায়। বালুচরি, তসর, কাঁথাস্টিচ থেকে ফ্যান্সি সিল্ক, লিনেন, হ্যান্ডলুমের নানা ধরনের শাড়ি পাওয়া যাবে এই মেলায়। ছেলেদের কুর্তা-পাঞ্জাবি, মেয়েদের সালোয়ার, ডিজাইনার গামছাও পাওয়া যাবে এই মেলায়। ঘর সাজানোর হরেক জিনিসের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন বাংলার শিল্পীরা। শাড়ি, ব্যাগ, গয়নার সঙ্গে পাওয়া যাবে মসলন্দ মাদুর, ছৌ মুখোশ, ডোকরা, তামার প্রদীপ, খেজুর পাতার ম্যাট-ট্রে, বেত-কাঠ-কাপড়ের ঘর সাজানোর জিনিস, ঝিনুক, গালা ও শোলার তৈরি নানা হাতের কাজ নজর টানবে। সৃষ্টিশ্রী মেলার আরও একটা বিশেষ আকর্ষণ হল স্বনির্ভর দলের মহিলাদের তৈরি নানা রকমের খাবার। গত বছরও আচার, গয়না বড়ি, আমসত্ত্ব, ঘি, নাড়ু থেকে নুডলস সবই নিয়ে এসেছিলেন বাংলার মা-বোনেরা। এবারেও তার ব্যতিক্রম হবে না। আনন্দধারা প্রকল্পের অধিকর্তারা বলছেন, এই মেলা একদিকে যেমন গ্রামীণ শিল্পের বিকাশ ঘটাবে তেমনি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের উপার্জনের সুযোগও করে দেবে। বাংলা নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতির প্রচারও হবে। সূত্র: দ্য ওয়াল ব্যুরো