শিরোনাম
শনি. ডিসে ৬, ২০২৫

সেন্টমার্টিন ইস্যু নিয়ে যা বললেন মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র

অমূল্য সম্পদ বলা হয়ে থাকে দেশের একমাত্র ও অনন্যসুন্দর প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনকে। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমার সীমান্তের পার্শ্ববর্তী ৮.৩ বর্গকিলোমিটারজুড়ে সেন্টমার্টিনের অবস্থান। দ্বীপটিতে স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা ৯ হাজারের বেশি। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে আরও ৯ হাজার পর্যটক সেখানে অবস্থান করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে সেন্টমার্টিন দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-সেন্টমার্টিন দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে মার্কিন দূতাবাস। তবু সেন্টমার্টিন নিয়ে আলোচনা যেন থামছে না। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দ্বীপের বাসিন্দাদের মাঝে।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রয়োজনে রক্ত দেব, এরপরও দ্বীপ ছেড়ে কখনো কোথাও যাব না। সেন্টমার্টিনের সচেতন বাসিন্দারা বলছেন, কখনো যদি সেন্টমার্টিন রক্ষায় তাদের জীবন দিতে হয় তবে তারা জীবন দিতে প্রস্তুত। সেন্টমার্টিনকে যদি কোনো দেশের হাতে কেউ তুলে দিতে চায়, জনগণ কখনো সেটা মেনে নেবে না। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ শক্তিশালী ও সহযোগিতামূলক অংশীদারত্ব বজায় রাখে। আমরা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করি। দেশটির কোনো ভূখণ্ডের ওপর আমরা কোনো দাবি করিনি।’

বিশিষ্টজন ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া: ‘কক্সবাজার সম্পদ রক্ষা আন্দোলন কমিটি’র সমন্বয়ক কলিম উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, সেন্টমার্টিন অন্য একটি দেশের দাবি করার বিষয়টি প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক স্টান্টবাজি। এরপরও যদি কোনো দেশ সেন্টমার্টিন দাবি করে থাকে, সেটা অন্য দেশের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষমতা কোনো সরকারের নেই। কারণ, এ দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটির মালিক হচ্ছে জনগণ। তবে সরকার চাইলে সেন্টমার্টিন ঘিরে যে কোনো দেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারে।

তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন এ দেশের অমূল্য সম্পদ। তাছাড়া দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ এরিয়া হচ্ছে এই প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন। আকর্ষণীয় দ্বীপটিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে পর্যটনের পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে দেশের চেহারা বদলে যাবে বলে আমি মনে করি। সুতরাং সেন্টমার্টিন নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হলে স্থানীয় বাসিন্দাসহ দেশবাসীকে নিয়ে প্রতিরোধ করা হবে।

সেন্টমার্টিন ইস্যুতে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি ফোরামের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল কাদের চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আমার মনে হয় না যুক্তরাষ্ট্র সেন্টমার্টিন দাবি করেছে। যদি দাবি করে থাকে তাহলে সেন্টমার্টিন রক্ষায় প্রয়োজনে আবারও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো আরেকটি যুদ্ধ করব। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা কোনো ছাড় দেব না।

তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে অতীতেও অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। আর কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেওয়া হবে না। এ দ্বীপটিতে ১২ হাজারের মতো মানুষের বসবাস। যারা খেয়ে না খেয়ে সেন্টমার্টিনকে আগলে রেখেছে। তাদের সঙ্গে যেন কেউ বেইমানি না করে, সবাইকে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপির মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল যুগান্তরকে বলেন, আমেরিকার দূতাবাস ইতোমধ্যে জানিয়েছে যে তারা সেন্টমার্টিন দাবি করেনি। সুতরাং আমার মনে হয় সরকার সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য সেন্টমার্টিনকে ইস্যু বানাচ্ছে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে জনগণ এত বোকা নয়। তিনি বলেন, বিএনপি তিন দফায় ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। কই আমেরিকা বা কোনো রাষ্ট্র কখনো সেন্টমার্টিন দাবি করেনি। সুতারাং সেন্টমার্টিন ইস্যুটি সস্তা রাজনীতি।

এ বিষয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে টেকনাফের উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, সেন্টমার্টিন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই চূড়ান্ত। এর বাইরে কোনো কথা বলতে চাই না।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *