স্বাস্থ্য ডেস্ক: রোজায় প্রায় সব জায়গায়ই সেহরি ও ইফতার নিয়ে থাকে নানা ধরনের আয়োজন। যেহেতু রোজা রাখার প্রস্তুতি সেহরি দিয়েই শুরু হয়, তাই সঠিক ধরনের খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ যা সারাদিনের ক্ষুধা মোকাবেলায় সাহায্য করবে।
সেহরিতে যেসব খাবার খাওয়া উচিত
তুরস্কের পুষ্টিবিদ ইসমেত তামের বলেছেন, ‘রমজান মাসে দিনভর যে শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা থাকে তা পূরণে সেহরি ও ইফতারে এমন খাবার খেতে হবে যেগুলো প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ এবং এ সময় যথেষ্ট পানি পান করতে হবে।’
তিনি বলেন, মূলত পুষ্টিকর কিন্তু খুব বেশি ভারী না, আবার পেট ভরবে এমন খাবার খেতে হবে। যেমন দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, শসা-টমেটোর মতো সালাদ, ফলমূল, স্যুপ, অলিভ অয়েল অথবা কম তেলে রান্না করা সবজির পাশাপাশি মাছ, মাংস এবং ‘দই-চিড়া’র মতো খাবার খেতে হবে।
পুষ্টিবিদ ব্রিজেট বেনেলামের মতে, সেহরিতে জটিল ধরনের শর্করা খাবার খাওয়া ভালো, বিশেষত হোলগ্রেইন বা পূর্ণাঙ্গ শস্য, কারণ তেমন খাবার ধীরে ধীরে শরীরে শক্তি সঞ্চার করে যেটা সারাদিনের জন্য উপকারি। ওটস, হোলগ্রেইন বা সম্পূর্ণ শস্যের রুটি, সিরিয়াল এ জাতীয় খাবার সেহরির জন্য অনেক ভালো।
কিছু গবেষণায় দেখা যায়- মটরশুঁটি, শিম বা ছোলার মতো আঁশযুক্ত খাবার ভরপেট খাবার খাওয়ার মতো অনুভূতি ৩০ শতাংশের বেশি বাড়িয়ে দেয়। আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে আরও রয়েছে ডাল জাতীয় শস্য, খোসাসহ রান্না করা আলু বা শেকড় জাতীয় সবজি, বাদাম, তেলবীজ জাতীয় খাদ্য এবং ফলমূল। হোলগ্রেইন আটার রুটি ছাড়াও বাদামি চালেও আঁশ থাকে।
পুষ্টিবিদ বেনেলাম বলেন, ‘লবনযুক্ত খাবার পানির তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয় এবং যেখানে সারাদিন পানি পান করা যাবে না সে অবস্থায় তৃষ্ণার্ত হওয়ার মতো পরিস্থিতি নিশ্চয়ই কেউ চাইবে না। সেহরিতে ক্যাফেইন আছে তেমন পানীয় পরিহার করাও গুরুত্বপূর্ণ।
ইফতারে যেসব খাবার খাওয়া উচিত
ইফতারে যথেষ্ট পরিমাণে তরল পদার্থের পাশাপাশি শরীরে শক্তি পেতে এমন খাবারও গুরুত্বপূর্ণ যেখানে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে। এ চাহিদা মেটাতে ইসলামের নবী মোহাম্মদ (সা.) এর সময় থেকে খেজুরই সবচেয়ে বেশি খেয়ে আসছে মানুষ।
পুষ্টিবিদ ব্রিজেট বেনেলাম বলেন, শক্তি সঞ্চয় এবং দেহে পানির ঘাটতি পূরণে খেজুর এবং পানি রোজা ভাঙ্গার খুবই উৎকৃষ্ট উপায়। সারাদিন না খেয়ে থাকার পর খুব ভারী খাবার দিয়ে শুরু করলে তা হয়তো আপনাকে ক্লান্ত, অলস ও অসুস্থবোধ করাতে পারে। এছাড়া ডাল, শিম বা মটরশুঁটির মতো বীজ, সবজি দিয়ে তৈরি করা স্যুপও উৎকৃষ্ট। কারণ এতে করে দেহে পর্যাপ্ত পুষ্টি ও আঁশ পাওয়া যায় কোনও হাঁসফাঁস বোধ করা ছাড়াই।
ইফতারের খাবার ভারসাম্যপূর্ণ হওয়াটা প্রয়োজন। যেমন- স্টার্চসমৃদ্ধ বা শর্করাজাতীয় খাবার, আঁশসমৃদ্ধ সবজি-ফলমূল, দুগ্ধজাত খাবার, প্রোটিনসমৃদ্ধ মাছ-মাংস বা ডিমের মতো বিভিন্ন ধরনের খাবার ভারসাম্য রেখে খাওয়া উচিৎ। মিষ্টি বা মাত্রাতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিহার করা উচিৎ কারণ এতে করে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যের পুষ্টিবিদ এবং ডায়েটিশিয়ান নাজিমা কুরেশির মতে, ইফতারিতে সপ্তাহে একদিন বেশি খাওয়া হয়ে গেলে তেমন সমস্যা নেই, কিন্তু সেটা যেন প্রতিদিন না হয়। তার মতে, ‘অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে আপনি অনুভব করবেন যে আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে দুর্বল বোধ করছেন এবং পরেরদিনের রোজার জন্য উৎসাহ হারাবেন।’
তিনি বলেন, পানি দিয়ে ইফতার শুরু করে খেজুর ও কিছু ফল খেয়ে প্রার্থনা শেষ করে নেয়া। এরপর বাকি খাওয়া-দাওয়া করা। যেকোনও খাবারই হোক না কেন, সেখানে যেন প্রোটিন, শর্করা জাতীয় খাবার ও সবজি থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।