ঢাকা অফিস: বছরের শুরুতেই বেড়েছে চালের দাম। সরকারও এটিকে অস্বাভাবিক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। তবে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও বাজারে চিত্র ভিন্ন। বাজারে গিয়ে ভোক্তার স্বস্তি মিলছে না। উল্টো গত এক সপ্তাহে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সবজির ভরা মৌসুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউসহ বেশ কয়েকটি সবজির দাম গত এক সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দামও। সাধারণত বছরের এ সময় সবজির দাম কম থাকে। কিন্তু এবার সবজির দাম বিগত বছরগুলোর রেকর্ড ভেঙেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কলাবাগান, মগবাজার, মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও তালতলা ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ঘুরে ক্রেতাদের হতাশার চিত্রই বেশি দেখা গেছে। তাদের দাবি প্রায় সব নিত্য পণ্যের দামই বাড়তির দিকে। দাম কমার কোন লক্ষণই নেই।
বিক্রেতারা জানান, বছরের শুরুতে বাজারে চালের দাম যতটা বেড়েছে, তা এখনো খুব একটা কমেনি। খুচরা পর্যায়ে চালভেদে কেজিতে কেউ কেউ এক-দুই টাকা কম রাখছেন, তবে বেশির ভাগ বিক্রেতা আগের বাড়তি দামেই চাল বিক্রি করছেন।
বিভিন্ন খুচরা বাজারে মোটা চাল (স্বর্ণা ও চায়না ইরি) বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৩-৫৫ টাকায়। এ ছাড়া মাঝারি মানের চাল (পাইজাম ও বিআর ২৮) প্রতি ৫৬-৬০ টাকা এবং সরু চাল (মিনিকেট ও নাজিরশাইল) ৬৮ থেকে ৭৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে মুরগির ডিম ও দেশি পেঁয়াজের দাম। বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা হয়েছে। আর ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৩৫-১৪০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগে ডিমের দাম ছিল ১৩০ টাকা।
সাধারণত জানুয়ারি মাসে দেশে শীতের সব সবজির দাম একবারে নিচে নেমে আসে। কিন্তু এই ভরা মৌসুমেও ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, লাউ, টমেটো, পেঁপেসহ বেশ কিছু সবজির দাম উল্টো বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এসব সবজির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
বাজারে সবজির পাশাপাশি মাছের দামও চড়া। বাজারে মাঝারি আকারের চাষের রুই প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং আকারভেদে তেলাপিয়া ও পাঙাশ ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম ১০-১৫ টাকা কমেছে। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
কিন্তু অধিকাংশ বাজারে এখন প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকায়। খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
ঢাকার বাজারে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৭০-১৭৩ টাকা এবং খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৪০-১৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে রমজানের পণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলার কেজি ৯০-১১০ টাকা ও ছোলার ডাল ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ছোট দানার মসুর ১৪০ টাকা, মোটা দানা মসুর ডাল ১১০ টাকা ও মুগ ডাল ১৭০–১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত এক মাসের মধ্যে এসব পণ্যের দাম ১০-২০ টাকা বেড়েছে। অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা আটা ৫০-৫৫, প্যাকেট আটা ৬৫-৬৮, খোলা ময়দা ৬৫-৭০ এবং প্যাকেট ময়দা ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বাজার করতে আসা এক ক্রেতা তাবাচ্ছুম অন্তরা বলেন, ‘সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাজারে এসে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। সাধ্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। যা সংসার খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।’
হাতিরপুল বাজারের এক খুচরা বিক্রেতা বলেন, ‘রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীচক্র পূর্বের ছক কাজে লাগাচ্ছে। রমজাননির্ভর পণ্যের দাম তারা আগেই বাড়িয়ে নিচ্ছে। ছোলা, ডাল সহ রমজানে যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে তার মূল্য মোকাম পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে। ফলে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম বেড়েছে। একেক পণ্যের দাম একেক অজুহাতে বেড়েছে। কিন্তু কোনোকিছুর দাম কমেনি।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের দামের এমন ঊর্ধ্বগতিতে নাজেহাল ক্রেতারা। তারা সংসার সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, প্রতি বছর শীতকালে হরেক রকম সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে। তবে এবার ঠিক উল্টো। প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে দাম। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।