শিরোনাম
সোম. ডিসে ৮, ২০২৫

হাঁটাহাঁটি, সেলফি তোলা গাড়ির রেস সব চলছে বঙ্গবন্ধু টানেলে

বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: বঙ্গবন্ধু টানেলে কার রেসিং, বেপরোয়া গাড়ি চালনা, ভেতরে দাঁড়িয়ে ছবি তোলাসহ বিভিন্ন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা চলছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে কর্তৃপক্ষ। তবে দায়ী কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা আইন অমান্য করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে সামনে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

টানেলের ভেতর রেস করা কয়েকটি গাড়ি শনাক্ত করেছে পুলিশ। যারা নিয়ম অমান্য করেছে তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গত রাতে সাতটি গাড়ি চালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করা হয় গত ২৮ অক্টোবর। এরপর ২৯ অক্টোবর টানেলটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই দিন রাতেই একদল যুবক কার নিয়ে টানেলের ভেতর রেস করেন। টানেলে থাকা সিসিটিভিতে এটা ধরা পড়ে।

একই দিন আনোয়ারা টোল প্লাজা এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগে একটি প্রাডো জিপের।

৩০ অক্টোবরের আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, টানেলের ভেতরে একটি কারকে পেছন থেকে আরেকটি গাড়িকে ধাক্কা দিতে দেখা গেছে। টানেলের ভেতরে কারটির গতি ৬০ কিলোমিটার থাকার কথা থাকলেও অনেক কম ছিল।

সর্বশেষ চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদক আবু তারেক এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিদুয়ানুল ইসলামকে টানেলের ভেতরে গাড়ি থামিয়ে সেলফি তুলতে দেখা যায়। টানেলের ভেতর গাড়ি থামানো ও ছবি তোলা নিষিদ্ধ।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘টানেলের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেসব ঘটনা ঘটছে তার নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। প্রথম থেকেই নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা নেওয়া না হলে টানেলে দুর্ঘটনা বাড়বে। যারা টানেলের ভেতর আইন ভঙ্গ করেছে তাদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা দরকার। তা করা না হলে টানেলকে নিরাপদ করা যাবে না। এখনই ব্যবস্থা নিয়ে এসব ঘটনা বন্ধ করতে হবে।’

২৯ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে টানেলটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেদিন মধ্যরাতেই স্পোর্টস কার নিয়ে টানেলের ভেতর রেসে মেতে ওঠেন একদল উঠতি বয়সী তরুণ। পরে এসংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। টানেলের ভেতরে অন্তত ১০টি গাড়ি রেসে অংশ নেয়। এ সময় একটি গাড়ি আরেকটিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। যদিও টানেলের ভেতর সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলতে পারে। এই ঘটনার পর গাড়িগুলোর মালিককে শনাক্তে কাজ শুরু করে পুলিশ। এই ঘটনার সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এখন পর্যন্ত চারটি গাড়ি শনাক্ত করা হয়েছে। বাকি গাড়িগুলোও শনাক্তে কাজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

টানেলের সহকারী প্রকৌশলী (টোল ও ট্রাফিক) তানভীর রিফা বলেন, ‘টানেল ব্যবহারকারীদের জন্য ১৪টি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ। টানেলের ভেতর সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলতে পারে। কিন্তু রেসে অংশ নেওয়া গাড়িগুলো যেভাবে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিল, তাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। এ ছাড়া টানেলে ছবি তোলা, টানেলের ভেতর গাড়ি ধাক্কা দেওয়ার মতো বিষয়গুলো আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে এসব বিষয়ে আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, টানেলে গাড়ি চলাচল সবে শুরু হয়েছে। তবে দ্রুত সব ঠিক হয়ে যাবে।

টানেলের এক প্রান্ত পড়েছে কর্ণফুলী থানায়। অন্য প্রান্ত পড়েছে পতেঙ্গা থানায়। কার রেসের ঘটনায় কর্ণফুলী থানার ওসি জহির হোসেন গতকাল বুধবার বিকেল ৫টায় কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, টানেলের ভেতর রেসের ঘটনায় কোনো মামলা করা হয়নি। টানেল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দিলে মামলা করা হবে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) শাকিলা সুলতানা বলেন, ‘রেসের ঘটনায় টানেল কর্তৃপক্ষ গাড়ির নম্বরগুলো যাচাই-বাছাই করে অভিযোগ দেবে। এরপর সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা করা হবে। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে এখন পর্যন্ত চারটি গাড়ি শনাক্ত করা হয়েছে। নম্বরগুলো দেখে বিআরটিএ থেকে গাড়ির মালিক খুঁজে বের করব। মামলাটি তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরো বলেন, টানেলে নিরাপত্তা দিতে গিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। মানুষ প্রথমদিকে অতিরিক্ত উত্তেজনা থেকে আসলে এই ধরনের কাজ করছে।

৪২ লাখ টাকা টোল আদায়

টানেলের সহকারী প্রকৌশলী (টোল ও ট্রাফিক) তানভীর রিফা বলেন, ‘২৯ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় ৪২ লাখ টাকার টোল আদায় করা হয়েছে। প্রায় ১৯ হাজার গাড়ি থেকে এই টোল আদায় করা হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *