বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যদের কারও অবৈধ আয় ও সম্পদ থাকলে তা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির তথ্যমতে, বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে ১৩ জনের বিধিবহির্ভূত জমি আছে ৮০০ একরের বেশি। এসব জমি যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাজেয়াপ্ত করে ভূমিহীনদের মধে৵ বিতরণের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
দ্বাদশ সংসদের সদস্যদের নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণপূর্বক টিআইবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অস্থাবর সম্পদের ভিত্তিতে সংসদ সদস্যদের প্রায় ৮৫ শতাংশই কোটিপতি (অস্থাবর সম্পদ মূল্যের ভিত্তিতে)। এক শ কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে এমন সংসদ সদস্যের সংখ্যা ১৫।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্যদের অস্থাবর সম্পদের সম্মিলিত মূল্য প্রায় ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার বেশি। সর্বশেষ চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের গড় অস্থাবর সম্পদের তুলনা করে দেখা গেছে, দশম সংসদের তুলনায় একাদশ সংসদের সদস্যদের সম্পদ বেড়েছে ৭৫ শতাংশের বেশি।
টিআইবির বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের আইনে (ল্যান্ড রিফর্ম অ্যাক্ট, ২০২৩) একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ (কৃষিজমির ক্ষেত্রে ৬০ বিঘা এবং অকৃষি জমিসহ যা ১০০ বিঘা পর্যন্ত যেতে পারে) ভূমির মালিক হতে পারে। কিন্তু ১৩ জন সংসদ সদস্যের কাছে আইনি সীমার বাইরে জমি আছে। এই জমির পরিমাণ ৮০০ একর (৩ বিঘায় ১ একর বিবেচনায়)।
বিধিবহির্ভূতভাবে অর্জিত এই সম্পদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লিখিত অঙ্গীকারের (পৃষ্ঠা ৪২, বুলেট ২) যথার্থতার দৃষ্টান্ত হিসেবে সংসদ সদস্যদের অবৈধ আয় ও সম্পদ থাকলে তা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় বাজেয়াপ্ত করাসহ দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘বিশেষ করে, আইনি সীমার বাইরে মোট বাড়তি ৮০০ একরের বেশি জমি বিধিবহির্ভূতভাবে সংসদ সদস্যদের অনেকের মালিকানাধীন রয়েছে। তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাজেয়াপ্ত করে ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণের আহ্বান জানাই আমরা।’
তথ্য বিশ্লেষণ করে টিআইবি জানিয়েছে, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্পদের বৃদ্ধির হারও প্রায় একই (৭০ দশমিক ৪১ শতাংশ)। আবার, বছরে এক কোটি বা তার বেশি টাকা আয় করেন এমন ১১২ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন এবারের সংসদে, যা পুরো সংসদের প্রায় ৩৮ শতাংশ। আর ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা আয় করেন ৫২ শতাংশ সংসদ সদস্য।
নতুন সংসদ সদস্যদের ৬৫ শতাংশই ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে টিআইবি। যা সর্বশেষ চারটি সংসদের মধ্যে সর্বোচ্চ। নবম জাতীয় সংসদে ৫৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ, দশম জাতীয় সংসদে ৫৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং একাদশ জাতীয় সংসদে ৬১ শতাংশ সংসদ সদস্যই ছিলেন ব্যবসায়ী। অন্যদিকে, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্যদের মধ্যে ব্যবসায়ীর হার ছিল ১৮ শতাংশ।
নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীর হলফনামায় দেওয়া শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা ও আয়ের উৎস, মামলার বিবরণী, প্রার্থীর নিজের ও তাঁর নির্ভরশীলদের আয়-ব্যয়, সম্পদ ও দায়-দেনা এই আট ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ করে ‘নো ইওর ক্যান্ডিডেট’ নামে ইন্টারঅ্যাকটিভ ড্যাশবোর্ড প্রস্তুত করে টিআইবি। সেই ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সদস্যদের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে।