ব্যাংক থেকে ২০০০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার পথ সহজ করতে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন ইস্টার্ন ব্যাংকের এক নারী কর্মকর্তাকে ১০ কোটি টাকার কাবিনে দ্বিতীয় বিয়ে করেন বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।
গত বুধবার আলমগীর ও তার দুই সহযোগীকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। গ্রেপ্তার অপর দু’জন হলেন- শফিকুল ইসলাম ও ইমরান হোসাইন।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন আলমগীর। বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টের নামে ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার তৈরি করে সাব-ঠিকাদারদের কাছ থেকে নিয়েছেন অন্তত ৪০ কোটি টাকা।
সিআইডি আলমগীর হোসেনকে এক সময়ের ‘মানব পাচারকারী’ হিসেবে অভিহিত করে জানায়, মানব পাচারসহ বিভিন্ন কারণে তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা রয়েছে দেশের বিভিন্ন থানায়।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন বলেন, রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশানে ‘আল তাকদীর ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খোলেন আলমগীর। তিনি এর চেয়ারম্যান। শফিকুল ইসলাম প্রজেক্ট ডিরেক্টর এবং ইমরান হোসাইন ডিরেক্টর প্রশাসন। তার প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার কাজ পেয়েছে বলে ব্যাপক প্রচার চালান তিনি। বিষয়টিকে সত্য হিসেবে উপস্থাপনের জন্য ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডারও তৈরি করেন তিনি। তার নিজস্ব অনলাইন টিভি ‘তাকদীর টিভি’তে তিনি এ-ও প্রচার করেন যে, সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে ব্রিজ প্রজেক্টের ৩০০ কোটি সিএফটি বালি সরবরাহের জন্য গত বছরের মার্চে ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছেন।
সিআইডি জানায়, এ কাজের জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে সাব-ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার প্রচার চালিয়ে ৩০০ জনকে সংগ্রহ করেন তিনি। এক সিএফটি বালিতে ১০ টাকা লাভ হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাব-ঠিকাদারদের কারও সঙ্গে দুই কোটি সিএফটি, কারও সঙ্গে পাঁচ কোটি সিএফটি, কারও সঙ্গে আবার ১০ কোটি সিএফটি বালি ভরাটের কাজ দেওয়ার চুক্তি করেন তিনি। এ কাজের কমিশন হিসেবে এসব সাব-ঠিকাদারের কাছ থেকে অন্তত ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন আলমগীর।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আলমগীর নিজেকে বড়মাপের ঠিকাদার প্রমাণের জন্য গুলশান-১ এ অফিস নিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ করে ডেকোরেশন করেন। গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টের ১১০ আইটেমের খাবার পরিবেশন করে তার নিয়োগ করা সাব-ঠিকাদারদের আপ্যায়ন করা হয়। এ ছাড়া তাদের বিভিন্ন রিসোর্টে নিয়ে কয়েকবার বড় ধরনের পার্টিরও আয়োজন করা হয়। এমনকি সাব-ঠিকাদারদের বিশ্বস্ততা অর্জন করতে প্রজেক্ট এলাকায় বালি সরবরাহের নিজস্ব ডাম্পিং পয়েন্টও উদ্বোধন করেন তিনি।
এভাবে টাকা আত্মসাতের পর আত্মগোপনে চলে যান আলমগীর ও তার সহযোগীরা। বালি ফেলানোর জন্য আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পান ভুক্তভোগীরা। পরে গুলশানে আল-তাকদীরের কার্যালয়ে গিয়ে সেখানে তালা ঝুলতে দেখেন। প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তারা তখন সিআইডিকে অবহিত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, আলমগীরের সঙ্গে ব্যাংকের লেনদেনের সূত্র ধরে ইস্টার্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা সালমা সুলতানা সুইটির সঙ্গে পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। আলমগীর তার সঙ্গে ইস্টার্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ২০০০ কোটি টাকার এলসি, ১২০০ কোটি টাকা ক্যাশ করার সমঝোতায়ও পৌঁছেন। এর পর আলমগীর প্রথম স্ত্রীকে না জানিয়ে সালমাকে ১০ কোটি টাকার কাবিনে গত বছর জুলাই মাসে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। মাসে দুই লাখ টাকা ভাড়া চুক্তিতে গুলশানের একটি বাসায় উঠে বসবাস শুরু করেন তারা। পরে এলসি না হওয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য হয় আলমগীরের। গত নভেম্বরে বিয়ে বিচ্ছেদ হয় তাদের। ১০ কোটি টাকা দেনমোহরের মধ্যে নগদ চার কোটি টাকা এবং ৭৫ লাখ টাকার স্বর্ণলাঙ্কার দেওয়া হয়েছে সালমাকে। দেনমোহরের বাকি টাকা আদায়ের জন্য তিনি আলমগীরের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন।