আসাম নিউজ ডেস্ক: কিছুদিন পূর্বে আসামের বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর এক প্রতিনিধিদল দিল্লিতে গিয়ে দেশের মাননীয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে বরাক পৃথকীকরণের দাবিতে স্মারকপত্র জমা দিয়েছেন।
এছাড়া এই দাবিতে বিডিএফ এর পক্ষ থেকে দিল্লিতে একটি সাংবাদিক সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয়েছিল। আজ বিডিএফ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানান বিডিএফ কর্মকর্তারা।
এদিন সাংবাদিকদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন যে তাঁরা ইতিমধ্যেই এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছেন। দিল্লির একটি বিশ্বস্ত সূত্র থেকে তাঁরা জানতে পেরেছেন যে কেন্দ্র সরকার এই দাবিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে এই উপত্যকার কি কি সমস্যা তা জানাতে তাঁদের বলা হয়েছে।
তিনি বলেন তাঁরা এই উপত্যকার সমস্ত জ্বলন্ত সমস্যার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারকে অবহিত করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন যে বরাক পৃথকীকরণের দাবি মোটেই নতুন নয়।
গত সত্তর বছর ধরে এই দাবি বারবার উত্থাপিত হয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী একটা সময়ে এই দাবির যথার্থতা উপলব্ধি করে এই অঞ্চলকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় নেতাদের দ্বিধাদন্দের জন্য তা বাস্তবায়িত হয়নি।
প্রদীপ বাবু এদিন বলেন যে তাঁরা ডিটেনশন ক্যাম্পে বাঙালি হিন্দুদের দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে অবিলম্বে তাঁদের মুক্তির দাবি পেশ করেছেন। ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেভাবে বরাকের দুটি আসন কর্তন করা হয়েছে তাও বিস্তারিত ভাবে তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছেন।
এই ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়া বাতিল করে সারা দেশের সাথে আগামীতে জনসংখ্যার ভিত্তিতে বরাকের সমষ্ঠি নির্ধারণ বা নিদেনপক্ষে পূর্বাবস্থা অর্থাৎ পনেরটি আসন বরাকের জন্য বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে।
এছাড়া এনার্সি প্রক্রিয়ার অবশিষ্ট কাজ শেষ করে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ না করে যেভাবে ২৭ লক্ষ লোকের আধার কার্ড ঝুলিয়ে সমস্ত সরকারি সুযোগ , সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে তার প্রতিবাদও জানানো হয়েছে।
বিডিএফ মুখ্য আহ্বায়ক এদিন বলেন যে তাঁরা ,মহাসড়ক ,মাল্টিমডেল লজিস্টিক পার্ক, করিমগঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ, মালুয়াতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ধলাইতে হোমিওপ্যাথিক কলেজ সহ সমস্ত ঘোষিত প্রকল্প যার কাজ এখনও শুরু হয়নি বা অর্ধপথে থেমে আছে সেসব ও কেন্দ্রীয় স্বরাস্ট্রমন্ত্রককে অবহিত করেছেন।
বরাকের চারলক্ষ রেজিস্ট্রিকৃত বেকারদের দুরবস্থা, স্থানীয় নিম্নস্তরের পদে চাকরি বঞ্চনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন। উল্লেখ করছেন শোচনীয় যোগাযোগ ব্যাবস্থা তথা নাগরিক পরিষেবার অবনতির কথাও। ইদানীং আরো তথ্য তাদের কাছে চাওয়া হচ্ছে এবং যতদূর সম্ভব তাঁরা তা জানাবার চেষ্টা করছেন।
প্রদীপ বাবু এদিন আরো বলেন যে সমর্থনের প্রশ্নে তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছেন যে উপত্যকার অধিকাংশ লোকই ধীরে ধীরে এই দাবির সপক্ষে এগিয়ে আসছেন। তিনি বলেন ১০০ শতাংশ সমর্থনের আশা অবাস্তব কারণ সমস্ত ভালো কাজের ক্ষেত্রেই একাংশের বিরোধীতা স্বতঃসিদ্ধ।
তিনি বলেন স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৬১ এর ভাষা আন্দোলন অব্দি সর্বত্রই কিছু স্বার্থান্বেষী এবং অবিবেচকদের দেখা গেছে যারা এইসব আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন।
এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলনের সময়ও বরাকেরই একাংশের বিরোধীতার মুখোমুখি তাকে হতে হয়েছে। তিনি বলেন তাই এসব নিয়ে তাঁরা আদৌ বিচলিত নন। দাবি পূরণ না হওয়া অব্দি এই ব্যাপারে তাঁরা উদ্যমী থাকবেন এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
বিডিএফ মিডিয়া সেলের মুখ্য আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য এদিন বলেন যে কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছাকে তাঁরা অবশ্যই স্বাগত জানাচ্ছেন তবে তারজন্য বরাকে এই দাবিতে তাদের আন্দোলন কর্মসূচি থেমে থাকবেনা। তিনি বলেন এই দাবির পক্ষে ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট জনসমক্ষে তুলে ধরতে একটি পুস্তিকা প্রকাশের কাজ চলছে।
তিনি বলেন যে এটির একলক্ষ সংখ্যা ছাপিয়ে সমগ্র বরাক জুড়ে বিতরণ করার তাঁদের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া জনসংযোগের কাজও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
জয়দীপ বলেন যে তাঁরা বরাকের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট সভার মাধ্যমে এই আন্দোলনকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেবেন। এছাড়া আগামীতে একটি বড় মিছিল বা পদযাত্রা সংগঠিত করারও পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন সরকার অহেতুক এখানের শহরাঞ্চলে ১৪৪ ধারা জারি করে রেখেছে। মিটিং মিছিলের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি বলেন প্রয়োজনে তাঁরা এই ব্যাপারে হাইকোর্টে আবেদন জানাতেও প্রস্তুত রয়েছেন।
জয়দীপ এদিন আপামর বরাক বাসীর কাছে এই আন্দোলনে সাহায্য, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি আগ্রহীদের তাঁদের সাথে যোগাযোগ করারও আবেদন জানিয়েছেন।
বিডিএফ এর পক্ষ থেকে কল্পার্ণব গুপ্ত এক প্রেস বার্তায় এই খবর জানিয়েছেন।