ক্রীড়া ডেস্ক: ২০৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের সমৃদ্ধশালী দেশ সৌদি আরব। একমাত্র দেশ হিসেবে বিড করায় নিশ্চিতভাবে সৌদিকেই বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দিতে যাচ্ছে ফিফা।
তবে বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যদি ‘প্রবাসী শ্রমিকদের’ অধিকার নিয়ে ফিফা কোনো উদ্যোগ না নেয় তাহলে ফুটবলের অবকাঠামো তৈরি করতে গিয়ে অসংখ্য শ্রমিক প্রাণ হারাবেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ‘মৃত্যুপুরীতে’ পরিণত হবে সৌদি। কারণ সৌদিতে যত প্রবাসী শ্রমিক রয়েছেন তার বেশিরভাগই বাংলাদেশি। এছাড়া বিশ্বকাপ উপলক্ষে নিশ্চিতভাবে আরও অসংখ্য বাংলাদেশি সৌদিতে কাজ করতে যাবেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বুধবার (২০ মার্চ) জানিয়েছে, সম্প্রতি তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে ২০০৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সৌদিতে ১৩ হাজার ৬৮৫ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। বাংলাদেশের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০২২ সালে সৌদিতে দেড় হাজার বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে দিনে চারজন বাংলাদেশি না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন।
অসংখ্য বাংলাদেশি সৌদিতে যাওয়ায় মৃত্যুহার এতটা বেশি কি না সে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র ২০২৩ সালে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি সৌদিতে পাড়ি জমিয়েছেন।
গার্ডিয়ানের গবেষণায় পাওয়া গেছে ২০২২ সালে সৌদিতে মৃত্যু হওয়া বাংলাদেশিদের চার ভাগের তিন ভাগেরই মৃত্যু হয়েছে প্রাকৃতিক কারণে। যদিও সব প্রবাসীকে মেডিকেল টেস্ট দিয়ে এরপর সৌদিতে যেতে হয়েছে। সৌদিতে যেসব প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে তাদের গড় বয়স ৪৪ বছর।
কিন্তু সৌদি কর্তৃপক্ষের দেওয়া ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর আসল কারণ উল্লেখ করা হয়নি। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে এরমাধ্যমে এসব মৃত্যু ব্যাখ্যতীত রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে কঠিন জীবনযাপন ও কাজ, অত্যাধিক গরম এবং কর্মক্ষেত্রে হতাশার কারণে হয়ত এসব শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
২০২২ সালে কাতারে ফুটবল বিশ্বকাপ হয়। কাতারের মতো সৌদিও প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল। সৌদিতে দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু অংশের প্রবাসীরা বাস করেন। দেশটিতে সবমিলিয়ে ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবাসী রয়েছেন। যারমধ্যে বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।
যদিও সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসীদের অধিকার রক্ষায় সৌদি কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সৌদিকে বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব দিলে স্বল্পবেতনের শ্রমিকদের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পরিচালক মিন্কি ওরডেন গার্ডিয়ানকে বলেছেন, “স্বচ্ছতা ও কোনো সুস্পষ্ট কারণ ছাড়া কোনো দেশকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ইভেন্ট আয়োজন করতে দিলে এতে জীবনহানি ও প্রবাসী শ্রমিকরা ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এ বিষয়ে ফিফা কোনো শিক্ষাই গ্রহণ করেনি।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, সৌদিকে বিশ্বকাপের আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়ার আগে ফিফাকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে দেশটি কীভাবে মানবাধিকার ও শ্রমিক অধিকার সমুন্নত রাখবে।
২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের অবকাঠামো তৈরি করতে গিয়ে অসংখ্য বাংলাদেশি, নেপালি ও পাকিস্তানি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। সৌদিতেও যেন ওই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেটি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।