- গুলশানে বিএনপির ১১ নেতাকর্মী গ্রেফতার
রাজনীতি ডেস্ক: আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ সফল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। এ নিয়ে মতবিনিময় সভা ও বৈঠক করছেন দলটির নেতারা। মহাসমাবেশের জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অনুমতি চেয়ে গতকাল শনিবার লিখিত আবেদন করা হয়েছে। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তারা মহাসমাবেশটি করতে চান।
এদিকে মহাসমাবেশের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে আজ রোববার দলের যৌথ সভা ডাকা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই বৈঠকে দলের সিনিয়র নেতা ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা উপস্থিত থাকবেন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার ব্যাপারে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন। কারণ, ২৮ অক্টোবর সরকারি ছুটি থাকায় যান চলাচল কম থাকবে, জনদুর্ভোগ কম হবে। তা ছাড়া একই স্থানে গত ২৮ জুলাই মহাসমাবেশ ও গত ১৮ অক্টোবর জনসমাবেশ হয়েছে। তাই সরকারের কোনো অজুহাত তারা শুনবে না। তবে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনার মতো কিছু যাতে না ঘটে, সেদিকে নজর রাখছেন তারা।
বিএনপি ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসমাগম করতে চায়। এ ক্ষেত্রে সরকারের বাধা, গণপরিবহন ধর্মঘটসহ নানা প্রতিবন্ধকতা মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণা এগিয়ে নিতে হাতে নেওয়া হচ্ছে একগুচ্ছ কর্মসূচি। সমাবেশ সফল করতে দেশের প্রত্যেক বিভাগের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীর জন্যও রয়েছে দিকনির্দেশনা। কর্মসূচি সফল করতে ঢাকা মহানগরীর প্রতিটি মহল্লা, ওয়ার্ড ও থানায় নেতাকর্মীকে সংগঠিত করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নেতারা বলেছেন, তারা দলের হাইকমান্ডকে এবার আলাদা কিছু করে দেখাতে চান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নেই। অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক এবং উৎসবমুখর নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নেই। অথচ সরকার জোর করে নির্বাচনের নামে আবারও প্রহসন করতে চায়।’ আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের মাধ্যমে সরকারের প্রতি জনগণের অনাস্থা প্রকাশ পাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে প্রায় দেড় বছর ধরে রাজপথে আন্দোলন করছে বিএনপি। এই আন্দোলনে সমমনা ৩৭টি দল ও জোটকে সম্পৃক্ত করে গত ডিসেম্বরে শুরু হয় যুগপৎ আন্দোলন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় আন্দোলন জোরদার করার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দুর্গাপূজার পর আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে এক দফা দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে ‘মহাযাত্রা’ শুরু হবে, যা চলবে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত। কর্মসূচি সফল করতে এরই মধ্যে তৃণমূলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘এমন কর্মসূচির আগে সরকার যত বেশি গ্রেপ্তার, নির্যাতন, তল্লাশি ও হয়রানি করে, কর্মসূচিতে তত বেশি জনসমাগম হয়। নদী সাঁতরে, হেঁটে মানুষ সমাবেশে আসে। এবারও যদি তেমন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়, তাহলে আগামী ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশে ব্যতিক্রমী উদাহরণ সৃষ্টি হবে। যে কোনো মূল্যে মহাসমাবেশ সফল করা হবে।’
গুলশানে বিএনপির ১১ নেতাকর্মী গ্রেফতার
রাজধানীর গুলশান থানাধীন নতুনবাজার এলাকা থেকে বিএনপির ১১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গুলশান থানা পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, তারা ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গোপন বৈঠকে বসেছিলেন।
গ্রেফতাররা হলেন, তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ি এলাকার রিপন ইসলাম (৩৬), উত্তরার আজমপুর এলাকার মো. সিদ্দিক (৩৮), তুরাগের রানাভোলা এলাকার মনির (২৪), সবুজ সরকার (৩৮), বাউনিয়া এলাকার মিজান (২৫), ফুলবাড়িয়া এলাকার কামাল হোসেন (২৫), রমজান মার্কেট এলাকার সুমন (৩৫), উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের হৃদয় (১৯), ১৩ নম্বর সেক্টরের মাহাবুব আলম (৩০), ১২ নম্বর সেক্টরের মহসিন হাওলাদার (৩৪) ও জসিম উদ্দিন (২৯)।
গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত শেখ শাহানুর ইসলাম যুগান্তরকে জানান, গুলশান থানায় ২০২২ সালের একটি বিস্ফোরক মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সবাই বিএনপির নেতাকর্মী। ২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে গুলশান থানাধীন নতুনবাজার এলাকায় একটি স্থানে তারা গোপন বৈঠক করছিলেন। গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। এরপর এই ১১ জনকে সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয়। রোববার তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।