এ সময়ে যে কোনও কফিশপে এক কাপ কফি খেতে গেলেও আপনাকে ১০০ টাকা খরচ করতে হবে। লকডাউনের বাজারে এক কেজি মুরগির দামও তো ৩শ টাকার কম না। আর সেখানে কিনা আস্ত একটা বাড়ি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে ৮৫ টাকায়। বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, ঘটনা কিন্তু সত্যি। এই দামে বাড়ি বিক্রি হচ্ছে ইতালির সিনকিউফ্রন্দি শহরে।
ইতালি শুনলেই আবার ভয় পেয়ে যাবেন না যেন। কেননা ইতালির সিনকিউফ্রন্ডি শহরে করোনাভাইরাসে মৃত্যু তো দূরের কথা, একজনেরও সংক্রমণ ধরা পড়েনি। তারপরও সারি সারি খালি পড়ে আছে বাড়ি। তাই তো নিজেদের করোনামুক্ত শহর হিসেবে ঘোষণা করেই তারা বাইরের লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে নাম মাত্র মূল্যে বাড়ি বিক্রির অফার দিয়েছে।
ইতালির ক্যালাব্রিয়ার দক্ষিণ অঞ্চলের এই শহরে মূলত সিনকেফ্রন্দি সম্প্রদায়ের বাস। ইতালীয়দের কাছে এই শহরটির নাম সিনকিউফ্রন্দি। গাছগাছালি আর সবুজে সাজানো সুন্দর এক শহর। এখানেই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে মনোরম একটি বাড়ি। যার দাম মাত্র ১ ইউরো। ভারতীয় মুদ্রায় মাত্র ৮৫.৭৯ টাকা। এই এক ইউরোতেই মিলবে আস্ত একখানা বাড়ি।
এই ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং সিনকিউফ্রন্দি শহরের মেয়র মাইকেল কোনিয়া। তিনি বলেন, এই মিশনের উদ্দেশ্য শহরে ফের বসতি স্থাপন। অপারেশন বিউটি নাম দিয়ে শুরু হয়েছে বাড়ি বিক্রির অভিযান। মেয়র মাইকেল কোনিয়া বলেন, ‘পরিত্যক্ত বাড়িগুলি নতুন মালিকের হাতে তুলে দেওয়াই অপারেশন বিউটির লক্ষ্য।’
বরাবরই যে এই শহর এমন জনমানবহীন ছিল, তা কিন্তু নয়। এককালে অনেক লোকের বাস ছিল সিনকিউফ্রন্দি শহরে। কিন্তু, কর্মসত্রে, রুটিরুজির প্রয়োজন অনেকেই শহর ছেড়ে গিয়েছেন। কেউ বা আবার দেশ ছেড়েই চলে গেছেন। ফলে তাদের বাড়িগুলি দাবিদারহীন, পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ৮৫ টাকায় তেমনই এক-একটি বাড়ি তুলে দিতে চান মেয়র।
মেয়রের নিজের কথাই ধরুন না। জন্ম জার্মানিতে। মা-বাবা একটা সময় এই শহর ছেড়ে চলে যান জার্মানি। পিতৃভূমির কথা শুনে ইতালির এই শহরে ফিরে আসেন মিশেল। ‘আমাদের মতো অনেক পরিবারই দশেকের পর দশক ধরে এই শহর ছেড়ে গিয়েছেন। আমি আবার শহরের প্রাণস্পন্দন ফিরিয়ে আনতে চাই।’
সিনকিউফ্রন্দি’র অর্থ পাঁচ গ্রাম। কী নেই এখানে বলুন! মনকাড়া একাধিক পাহাড়, নদী আর দুটো সমুদ্র। বাড়ি থেকে গাড়িতে চেপে মাত্র পনেরো মিনিটে আপনি পৌঁছে যাবে সমুদ্রসৈকতে।মেয়েরের আক্ষেপ, এত কিছু থাকতেও গোটা শহরের যেন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ৪০ থেকে ৫০ বর্গ মিটারের এক-একটা বাড়ি, এ ভাবে পড়ে থাকতে দেখে মেয়রের মন কাঁদে।
তাই তো তিনি কাজের সন্ধানে যেসব যুবক যুবতীরা শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন তাদের খালি পড়ে থাকা বাড়িগুলি বিক্রি করে দেয়ার প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। তার ধারণা, এর ফলে শহরে ফের জনবসতি গড়ে উঠবে। তবে ক্রেতা হিসাবে তার পছন্দ অপেক্ষাকৃত কমবয়েসীদের। আর এজন্যই ওই শহরে এত কম দামে বাড়ি বিক্রির অফার দিয়েছেন মেয়র। অনলাইন ডেস্ক