বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার মর্যাদা দেয়ার পাশাপাশি সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের দাবির মধ্য দিয়ে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় ভাষাশহীদদের স্মরণ করেছে সমগ্র জাতি। ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে ফুল হাতে স্মৃতির মিনারে জড়ো হয় সর্বস্তরের মানুষ। সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পাশাপাশি নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুলে ভরে উঠে শহীদ মিনার। রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ বাজানো হয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। বিএনপি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
রাজধানীর বাইরে দেশের অন্যান্য স্থানেও ভাষাশহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধায় পালিত হয়েছে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। গোপালগঞ্জে রাত ১২টা ১ মিনিটে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম ও পুলিশ সুপার আল-বেলী আফিফা। এরপর বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, রাজনৈতিক সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রথমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান। পরে পুলিশ সুপার মো. সাখাওয়াত হোসেন, বীর সংসদ কমান্ড, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রীর পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মো. হেলাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা জানান।
চাঁদপুরে রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। ভোরে প্রভাত ফেরি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অফিস এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা হয়।
ভাষাশহীদ আবদুস সালামের গ্রাম ফেনীর সালাম নগরে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান। দিবসটি উপলক্ষে ভাষাশহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে দাগনভূঞা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।
রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে শোক শোভাযাত্রা বের করা হয়। পরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ কাজী কেরামত আলী।
নওগাঁয় একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। প্রথমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা ও পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক। সকালে প্রভাতফেরির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দফায় পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান শিক্ষার্থীরা।
যশোরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাসান মজুমদার, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারসহ সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতারা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুরে শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্বালন ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে ভাষাশহীদদের স্মরণ করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। রাত ১২টা ১ মিনিটে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু ও জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান।
ময়মনসিংহ নগরীর কেন্দ্রীয় টাউন হলে শহীদ মিনারে প্রথমে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ময়মনসিংহ সদর আসনের এমপি মোহিত উর রহমান শান্ত। এরপর শ্রদ্ধা জানান বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়া, রেঞ্জ ডিআইজি মো. শাহ আবিদ হোসেন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইউসুফ আলী, জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী প্রমুখ।
একুশের প্রথম প্রহরে খুলনা নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ও মহানগর কমান্ড, কেসিসির মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বিভাগীয় কমিশনার মো. হেলাল মাহমুদ শরীফ, কেএমপির পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক, রেঞ্জ ডিআইজি মঈনুল হক, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। দুপুরে নগর ভবনে সিটি করপোরেশনের আয়োজনে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। এছাড়া নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, দিনাজপুরসহ সারা দেশে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় ভাষাশহীদদের।