ঋদি হক, জকিগঞ্জ সীমান্ত থেকে: এবারে যুক্ত হলো অসমের করিমগঞ্জ ও বাংলাদেশের জকিগঞ্জ জলপথ। জকিগঞ্জের সঙ্গে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অর্থাত্ কুশিয়ারার পশ্চিম তীরে অসমের ঐতিহাসিক জাহাজঘাট। খানেই খালাস হবে পণ্য।
অবশ্য অসমে অপর একাধিক কর্মসূচির সঙ্গে এটিরও ভার্চ্যুয়াল উদ্বোধন করার কথা ছিল নরেন্দ্র মোদীর। কিন্তু রবিবার তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি থাকায় অসম কর্মসূচি বাতিল করেছেন বলে খবর।
রবিবার এই পণ্য খালাস হবে করিমগঞ্জে। এর আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে পণ্যবাহী একটি জাহাজ শুক্রবার বেলা দুটো নাগাদ জকিগঞ্জ পাইলট হাউজ ঘাটে নোঙর করে। সঙ্গে আরও দুটো খালি কার্গো। এগুলোতে পাথর পরিবহন হবে বাংলাদেশে।
দুই বাংলার আবেগ মিশে আছে কুশিয়ার স্রোতে। এই কুশিয়ারার বুকে এবারে উড়তে শুরু করেছে স্বপ্নের শঙ্খ চিল। কুশিয়ারার স্রোতের বিপরীতে পণ্যবাহী বাংলাদেশী জাহাজটি ঘণ্টা দু’য়েক দেরিতে লালসবুজ ও গেরুয়া পতাকা উড়িয়ে জকিগঞ্জ ঘাটে এসে নোঙর করে।
বাংলাদেশের পাইট হাউসের উল্টো দিকে কুশিয়ারার। পশ্চিম তীরে কালেরসাক্ষী হয়ে করিমগঞ্জের জাহাজঘাট মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে। নদীর তীরে পাইলট হাউসের সিড়িতে বসে থাকা সাবেক সেনাসদস্য মো. আবদুর রহিম বাবুল স্মৃতির কাতর কণ্ঠে বলেন, এবার ওপার কতই না আসা যাওয়া ছিল। স্বজনদের অনেকেরই বসবাস করিমগঞ্জ-শিলচরে।
দুই বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্যও পুরানো। দু’দেশের জলপথ আবারও সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। ৮৫ বছরের আবদুল গফুরও আবেগ-আপ্লুত। পণ্যবাহী জাহাজ দেখে ফোকলা মুখে হেসে গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করেন, যৌবনে ভারতবর্ষ দেখেছেন। সহপাঠীদের নিয়ে কয়লাবোঝাই জাহাজ থেকে দূরন্ত কুশিয়ারার জলে ঝাপিয়ে পড়েছেন। সেই দিন এখন অতীত। কুশিয়ার বুড়িয়ে গেছে। তার মতোই ভাটা যৌবন নিয়ে ধীর গতিতে বয়ে চলছে।
তবে, তাকে গতিশীল করতে হাত লাগিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত সরকার। আশুগঞ্জ থেকে করিমগঞ্জের কুশিয়ারা নদী খননের কাজ চলছে। খনন কাজ সম্পন্ন হলে বারোমাস পণ্যপরিবাহিত হবে।
শুক্রবার দেড়শ’ মেট্রিক টন সিমেন্ট নিয়ে জকিগঞ্জে আসা জাহাজটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্বোধনের কথা থাকলেও রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় রবিবারের কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শনিবার করিমগঞ্জের জাহাজঘাটে পণ্যবাহী জাহাজটি গিয়ে ভিড়বে। সেখানে পণ্য খালাস হবে।
জাহাজের সরকারি পাইলট আইয়ুব খান জানান, নদীর কোনো কোনো স্থানে প্রবল স্রোত। তাতে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের কিছুটা বিঘ্ন ঘটেছে। তিনি ৩টি জাহাজের নেতৃত্বে রয়েছেন। বাকী দুটো জাহাজে পাথর যাবে। তাছাড়া আরও দুটো জাহাজ পথে রয়েছে। ওগুলোতে অন্যান্য পণ্য পরিবহন করা হবে। সম্ভাবনাময় এই জলপথটি বারো মাস সচল রাখতে আঁটঘাট বেধে নেমেছে সরকার।
জকিগঞ্জে রয়েছে চমত্কার দোতলা একটি পাইলট হাউজ। তাতে দু’জন স্টাফও রয়েছেন। এই জলপথটি খননে ভারতের তরফে আশি শতাংশ এবং বাংলাদেশ কুড়ি শতাংশ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে।
আগামীতে রাজশাহীর গোদাগাড়ী ও পশ্চিমবঙ্গে ধূনিয়ান ময়া জলপথটি দ্রুত চালু করতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। অসমের করিমগঞ্জ, বদরপুর এবং সূতারকান্দি দিয়ে উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহণে বাংলাদেশের শেওলায় স্থলবন্দর অবকাঠামো নির্মাণ করবে সরকার। পাশাপাশি অসমের ধুবড়ি, শিলঘাট ও পান্ডু জলপথে ১০টি জাহাজ চলাচল করছে।