ঋদি হক, ঢাকা: অবাস্তব শর্ত জুড়ে দেওয়ার কারণেই রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপুঞ্জকে যুক্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রক। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিভিন্ন সংস্থার নেতিবাচক প্রচার, অবাস্তব শর্ত, অনড় অবস্থান ও অসহযোগিতার কারণেই তাদের সম্পৃক্ত করা সম্ভব হয়নি।
ভাসানচরে ১৬৪২ জন রোহিঙ্গাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। তাদের খাওদাওয়া এবং আবাসন-সহ অন্যান্য সহায়তা করছে বাংলাদেশ সরকার। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ মানবিক সহায়তা প্রদান করছে এমন সব দেশ এবং দাতা সংস্থাগুলোকে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়ার কাজে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বিদেশমন্ত্রকের স্থায়ী কমিটির বৈঠক মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য জানানো হয়। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করার বিষয়ে তাদের সম্পৃক্ত করা হয়নি বলে ইতিপুর্বে রাষ্ট্রপুঞ্জ যে বিবৃতি দিয়েছিল তার জবাবেই বিদেশমন্ত্রকের তরফে এই বক্তব্য জানানো হয়েছে।
একই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অবদানের জন্য চলতি বছর থেকে বঙ্গবন্ধু পদক দেবে বিদেশমন্ত্রক। প্রতি বছর একজন বাংলাদেশি কূটনীতিক এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিককে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ডিপ্লোম্যাটিক এক্সিলেন্স’ পদকে ভূষিত করা হবে।
পদক প্রবর্তনের প্রথম বছরে বাংলাদেশ বিদেশমন্ত্রকের মেরিটাইম ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খুরশীদ আলম এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমির শাহির সাবেক রাষ্ট্রদূত সায়েদ মোহাম্মদ আল মুহারিকে নির্বাচিত করা হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে এই পদক ঘোষণা করা হবে। জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে তা পদকপ্রাপকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
আমিরশাহির সাবেক রাষ্ট্রদূতকে পদক দেওয়ার বিষয়ে বলা হয়, তাঁর সময়ে বাংলাদেশে তিনটি অর্থনৈতিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তাঁর কর্মকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন বার সে দেশ সফর করেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল। দু’ ভরি সোনার একটি পদক এবং একটি সাইটেশন দেওয়া হবে। ফারুক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য বিদেশমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বিদেশ প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, মো. আব্দুল মজিদ খান, নাহিম রাজ্জাক এবং কাজী নাবিল আহমেদ যোগ দেন।
ভাসানচরে রোহিঙ্গা
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান জানিয়েছেন, ভাসানচর নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে একটি প্রতিবেদন উত্থাপিত হয়েছে। এর আগে রোহিঙ্গা-শিবির থেকে পালিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় নৌকার ইঞ্জিন বিকল হয়ে যে ৩০৬ জন রোহিঙ্গা সাগরে ভাসমান অবস্থায় ছিলেন তাঁদের উদ্ধার করে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁরা সেখানে ভালো আছেন।
এ প্রসঙ্গ টেনে ফারুক খান বলেন, সাগরে ভেসে থাকা রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে প্রথম নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই রাষ্ট্রপুঞ্জের সঙ্গে বিরোধ শুরু হয়। রাষ্ট্রপুঞ্জের মাস তিনেক আগের অবস্থান পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে গত দু’ দিনে। রোহিঙ্গারা যখন গভীর সমুদ্রে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলন তখন কিন্তু রাষ্ট্রপুঞ্জ এগিয়ে আসেনি। এমনকি অন্য কোনো দেশকেও তারা উদ্ধারের বিষয়ে বলেনি। তারা শুধু টেলিফোন করে বলেছে তাদের উদ্ধার করুন।
ফারুক খান আরও বলেন, ‘আমরা যে সব রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ভাসানচরে নিয়ে এসেছি তাঁরা খুশিতেই আছেন। সেই সব স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাকে অন্যান্য মানবিক সহায়তা দানের বিষয়ে এরই মধ্যে কক্সবাজারে কর্মরত ২২টি এনজিও আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’