অসমের শিলচরে আয়োজিত ৭২’তম প্রজাতন্ত্র দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রথমেই আসাম আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা এবং এই আন্দোলনের শহীদদের প্রতি সরকারের সমবেদনা ও সর্বতোভাবে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেও একবারও বরাকের ভাষা আন্দোলন বা ভাষা শহীদদের কথা স্থান পেলনা আবগারি তথা বনমন্ত্রী পরিমল শুক্ল বৈদ্যের ভাষণে।
এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর মূখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায়।
এক প্রেস বার্তায় তিনি বলেন – যে আন্দোলনের কর্মসূচি আদ্যন্ত বাঙালি তথা বরাক বিরোধী ছিল বরাকে দাঁড়িয়ে তার জন্য এত সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে মন্ত্রী তার নির্লজ্জ ও স্বার্থপর মনোভাবের প্রকৃষ্ট উদাহরণ রেখেছেন।
প্রদীপ বাবু বলেন সুদেষ্ণা সিংহ সহ বরাকের ভাষা শহীদরা এখনো সরকারি স্বীকৃতি তো পায়নি, কোনো আর্থিক সাহায্যও জোটেনি তাঁদের পরিবার পরিজনের। অথচ মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য তার ভাষণে সবিস্তারে আসাম আন্দোলনের শহীদদের সরকারি তরফে সাহায্য সহযোগিতার কথা ফলাও করে প্রচার করলেন।
তিনি বলেন এর আগেও বরাকের একটি সরকারি অনুষ্ঠানে মূখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য অসমীয়া ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন,যে সভায় শ্রোতাবৃন্দ প্রায় সবাই বাংলাভাষী ছিলেন।
কাজেই এদিনের দীর্ঘ বক্তব্যে একবারও ভাষা শহীদদের কথা উল্লেখ না করাই তার পক্ষে স্বাভাবিক ব্যাপার এবং এ সবই তার চাটুকারিতা ও বাঙালি তথা বরাক বিরোধী মানসিকতার দৃষ্টান্ত স্বরূপ।
বি ডি এফ মূখ্য আহ্বায়ক আরো বলেন মন্ত্রীর ভাষণে একবারও শোনা গেলনা মিনি সচিবালয়, লজিস্টিক পার্ক, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উন্নয়ন কিম্বা বরাকের বেকারদের প্রতি কোন আশ্বাস,যা বরাকের উন্নয়নের জন্য একান্ত জরুরী। প্রদীপ বাবু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন যে সম্প্রতি গ্রামোন্নয়ন বিভাগের ৭৫ টি শূন্য পদ,যার ৪৫ টি বরাকের, একটিতেও সুযোগ পাননি বরাকের প্রার্থীরা।
ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে এভাবে বরাকের পদগুলিতে লোক পাঠিয়ে এই উপত্যকা অসমীয়াকরণের চক্রান্ত করছে দিশপুর। যেমনভাবে তারা বাঙালি অধ্যুষিত গোয়ালপাড়া জেলার ভাষিক তথা সাংস্কৃতিক চরিত্রকে জোর জবরদস্তি বদলে দিয়েছিল।
বি ডি এফ আহ্বায়ক আরো বলেন যে ইদানীং রাজ্যের খিলঞ্জিয়াদের জমির পাট্টা দিচ্ছে সরকার, এদিনের ভাষনে যার কথা বড়াই করে উল্লেখ করেছেন মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য । অথচ কারা এই রাজ্যের খিলঞ্জিয়া বা ভূমিপুত্র তাই এখনো ঠিক করতে পারেনি এই সরকার।তিনি চ্যালেঞ্জ ঠুকে বলেন ক’জন বাঙালি ভূমিপুত্র হিসেবে এখন অব্দি জমির পাট্টা পেয়েছেন তা জনসমক্ষে প্রকাশ করুন মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য।
প্রদীপ দত্তরায় আরো বলেন আসাম চুক্তি অনুযায়ী অবৈধ নাগরিকদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে বলে উচ্ছসিত মন্ত্রীর কি একবারও মনে হয়না শিলচর রামনগরে তার দলেরই প্রধানমন্ত্রীর ডি ক্যাম্প নিয়ে প্রতিশ্রুতির কথা!
বিডিএফ এর মূখ্য আহ্বায়কের স্পষ্ট বক্তব্য – পরিমলবাবু শুধু বরাকের নয় সারা আসামের একমাত্র বাঙালি মন্ত্রী। তা সত্ত্বেও যেহেতু জাতিস্বার্থের তুলনায় ব্যাক্তিগত স্বার্থকে তিনি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তাই বরাক তথা সমগ্র আসামের বাঙালিদের এই জাতিবিরোধী নেতাকে অবিলম্বে বয়কট করা এবং আগামী নির্বাচনে এর যথাযোগ্য প্রতিদান দেওয়া অবশ্য কর্তব্য।
বরাক ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যের এইধরনের ভাষনের তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছে এবং অবিলম্বে জনসমক্ষে এজন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি জানান তিনি।
এক প্রেস বার্তায় জানিয়েছেন বিডিএফ মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জয়দীপ ভট্টাচার্য ও হৃষীকেশ দে।