আবদুর রহমান খান/আশরাফুর রহমান, পার্সটুডে: গেল একুশে ফেব্রুয়ারি বিশ্ববাসী গৌরবের সাথে পালন করেছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তবে এ গৌরবের দিনেও বেদনার কথা হচ্ছে মাতৃভাষা দিবসের সূতিকাগার এই বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষার লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে না।
বাংলাদেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের এক হিসাব বলছে, দেশে বাংলা ভাষার বাইরে বর্তমানে ৪০টির মতো জীবন্ত ভাষা রয়েছে। তার মধ্যে ৩৪টিই হচ্ছে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা। এসব ভাষায় কথা বলে বাংলাদেশের ৫০টির মতো জাতিসত্তার প্রায় ২৮ লাখ লোক।
বাংলাদেশের ২০১০ সালের শিক্ষানীতি অনুযায়ী- এসব জাতিসত্তার প্রাথমিক শিক্ষা তাদের মাতৃভাষাতেই দিতে হবে। যেসব জাতিগোষ্ঠী সংখ্যায় বেশি এবং যাদের ভাষার লিখিত রূপ আছে, এমন ছয়টি ভাষায় বই ছাপিয়ে কার্যক্রমটা শুরু করা হবে বলে তখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের সাত বছর পর, ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের জন্য গারো, সাদরি, চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা- এই পাঁচটি ভাষায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য তিনটি বই প্রকাশ করে সরকার। তবে রোমান হরফ নাকি বাংলা হরফ এ বিতর্কে আটকে যায় সাঁওতালি ভাষায় প্রাথমিক পাঠ্য বই রচনার কাজ। আর বাকি ৩০টির মতো ক্ষুদ্র জাতিসত্তার বিষয়ে এখনও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর জন্য লিখিত বর্ণমালা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সান্তাল কাউন্সিলের চেয়ারপারসন এস সি আলবার্ট সরেন রেডিও তেহরানকে বলেন, অহেতুক বিতর্কের নামে তাদের সান্তালি ভাষায় পাঠ্য পুস্তক রচনার কাজ বিলম্বিত করা হচ্ছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশে দুই লক্ষাধিক সান্তাল জনগোষ্ঠী আছে। সান্তালদের নিজস্ব বর্ণমালা দিয়ে শত বছর ধরে পড়ালেখা চলছে। সে ভাষার বদলে তাদের ওপর বাংলা চাপিয়ে দেয়া যাবে না।
ওদিকে, সরকারের দীর্ঘসূত্রতায় আটকে থেকে অপেক্ষা না করে সিলেটের চা অঞ্চল শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোর জন্য রোমান হরফে বই ছাপার উদ্যোগ নিয়েছে।
তাঁরই তত্ত্বাবধানে চা-বাগানের সাদরি, খাসিয়াদের খাসি, গারোদের মান্দি, মণিপুরিদের মৈতৈ ও পাঙন-এ পাঁচ ভাষার বই প্রকাশ করেছে উপজেলা পরিষদ।
একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গত ২১ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলের সরকারি-বেসরকারি ৮৪টি বিদ্যালয়ের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাপানো প্রায় চার হাজার বই বিতরণ কর্মসূচির সূচনা হয়েছে।