ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কেটেছে পটুয়াখালী উপকূলের কয়েক লক্ষ মানুষের। পাউবো’র ২৩.৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙে ৪৫ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপড়ে গেছে অসংখ্য গাছপালা। অস্বাভাবিক জোয়ারে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে ভেসে গেছে ২ হাজার ৬৩২টি পুকুর ও ৫৯০টি মাছের ঘের। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল। প্রাথমিকভাবে মৎস্য খাতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলার পানিবন্দি মানুষের ঘরে গতকাল থেকে চুলা জ্বলেনি। এরপরও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষের সংখ্যা ছিল নগণ্য। তবে বুধবার সকাল থেকে উপকূলে চলছে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি, থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতসহ ঝড়ো হাওয়া বইছে।
এদিকে নদীর পানি বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই পানিতে তলিয়ে গেছে উপকূলের অর্ধশত চর। জেলার সব ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে।
পাউবো কলাপাড়া নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর সূত্র জানায়, কলাপাড়ার ৫১৫ কি.মি. বেড়িবাঁধের ২৩.৮০০ কি.মি. সিডর ও আইলয় ক্ষতিগ্রস্ত। বেড়িবাঁধ নেই ১৪.৩৫০ কি.মি. এলাকার। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর, কোমরপুর ৪৭/১ পোল্ডার, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের গইয়াতলা এলাকার ৫০ মিটার করে দু’টি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লালুয়া ইউনিয়নের ৪৭/৫ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ এমনিতেই নেই, তারমধ্যে নতুন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ৮ কি.মি. বাঁধ।
এছাড়া ধানখালী ইউনিয়নের ৫৪/এ পোল্ডার ক্ষতিগ্রস্ত, চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত, ধূলাসার ইউনিয়নের ৪৭/৪ পোল্ডারের ১০০ মিটারসহ মোট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।
রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চরলতা এবং চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চর আন্ডা, চরমন্ডল ও নয়ারচরসহ ৫.৫ কি.মি. বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ভেসে গেছে ২ হাজার ৬৩২টি পুকুর ও ৫৯০টি মাছের ঘের। এতে মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকার।
কলাপাড়ার মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, কলাপাড়ার ১ হাজার ৬০০টি মাছের পুকুর এবং ৬১৬ একর জমিতে চাষকৃত ২৮২টি ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।