আন্দামান নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের রস দ্বীপের নতুন নাম নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু দ্বীপ৷ আরো দু’টি দ্বীপ নতুন নাম পেয়েছে৷ একটির নাম হয়েছে শহীদ দ্বীপ এবং অন্যটির স্বরাজ দ্বীপ৷
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী গত বছর ৩০শে ডিসেম্বর আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের তিনটি প্রধান দ্বীপের নতুন নামকরণ করেন৷ আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ সফরকালে তিনি বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পও ঘোষণা করেন৷
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের শীর্ষ নেতা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ গত ৩০ শে ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের তিনটি প্রধান দ্বীপের নতুন নামকরণের কথা ঘোষণা করেন৷ এই তিনটি দ্বীপ হলো, রস, নীল ও হ্যাভলক৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি সেনা আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ দখল করার পর নেতাজী এখানে আসেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে৷ সেই দিনটি ছিল আজ থেকে ৭৫ বছর আগে ১৯৪৩ সালের ৩০শে ডিসেম্বর৷ নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু আন্দামানে এসে ভারতের তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন৷ সেই ঐতিহাসিক দিনটির স্মরণে ৭৫-তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই দ্বীপপুঞ্জের তিনটি প্রধান দ্বীপের নতুন নামকরণ হয়৷ রস দ্বীপের নাম হয় নেতাজী সুভাষ দ্বীপ, নীল দ্বীপের নতুন নাম শহিদ দ্বীপ এবং হ্যাভলক দ্বীপের নাম স্বরাজ দ্বীপ৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী নেতাজীর নামে একটি স্মারক ডাকটিকিট এবং ৭৫ টাকার একটি বিশেষ মুদ্রাও প্রকাশ করেন৷ পাশাপাশি নেতাজীর নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাসও করেন মোদী৷
পরে স্থানীয় নেতাজী স্টেডিয়ামে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘‘যখনই স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত হিরোদের কথা ওঠে, তখন আমরা নেতাজীর নাম স্মরণ করি৷ আন্দামান নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের মাটিতেই ভারতের স্বাধীনতার প্রস্তাব দেন নেতাজী৷ স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেরণা পায় গোটা দেশ৷” মোদী জনসভায় উপস্থিত সবাইকে মোবাইল ফোনের আলো জ্বালিয়ে নেতাজীকে স্মরণ করার অনুরোধ করেন৷ সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে ওঠে শত শত মোবাইল লাইট৷ জনসভায় কেন্দ্র শাসিত এই অঞ্চলের জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করেন মোদী, যার মধ্যে আছে এনার্জি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পর্যটন৷ প্রধানমন্ত্রী মারিনা পার্কে ১৫০ ফুট উঁচু স্তম্ভে উত্তোলন করেন ভারতের জাতীয় পতাকা৷ এরপর তিনি যান ঐতিহাসিক সেলুলার জেল পরিদর্শনে৷ ব্রিটিশ আমলে সেলুলার জেলের বিভিন্ন সেলে বন্দি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা৷ যেমন, বীর বিনায়ক দামোদর সাভারকর, বাবা ভান সিং, ইন্দুভূষণ রায় প্রমুখ৷ নির্যাতিত সেইসব স্বাধীনতা যোদ্ধাদের রক্তের ঘ্রাণ মিশে আছে৷ তাই প্রধানমন্ত্রী সেইসব সেলকে তুলনা করেছেন মন্দিরের সঙ্গে৷
বিজেপি সরকারের এই ‘উথলে পড়া’ ভক্তির পেছনে কি বিশেষ রাজনৈতিক কারণ থাকতে পারে? এর উত্তরে নেতাজীর গড়া নিখিল ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক দলের কর্মকর্তা এবং তিন বারের বিধায়ক হরিপদ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভূমিকম্পের আগে কিছু পশু-পাখি তা আগাম আঁচ করতে পারে৷ তেমনি আগামী দুই-তিন মাসে নেতাজীর প্রতি মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধা বেড়ে যাবে, জানা কথা৷ কাল গ্যাসের দাম কম করা হলো, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের কল্যাণ প্রকল্পের কথা বললেন, রাহুল গান্ধী তিন রাজ্যে কৃষিঋণ মকুব করে দিলেন৷ এরা সব সিজনড ফ্লাওয়ার বা মরশুমী ফুলের মতো৷ বিজেপি ধর্মের নামে যে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে, মানুষ তা মেনে নেয়নি৷ মোদী সরকারের কাছে দৈনিক বহু খবরাখবর আসে এই বিষয়ে৷ ভারত এমন একটা দেশ, যেখানে বহু ভাষা, বহু ধর্ম, বহু সম্প্রদায়ের বাস৷ সবই রেকর্ড করা আছে৷ কিছু আবার রেকর্ড করা নেই৷ ভারতের মতো দেশে একই রীতি, একই জীবনধারা চলতে পারে না৷”
‘‘সেটা বুঝতে পেরেছিলেন একমাত্র নেতাজী৷ জাতীয় সংহতির কাঠামোয় তিনি গড়ে তুলেছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ৷ সেখানে সব ভারতীয় একই শব্দবন্ধে একে অপরকে সম্বোধন করবে৷ আর সেটা হলো ‘জয় হিন্দ’৷ কিন্তু পরবর্তী কালে আমরা তার ধারে কাছেও গেলাম না৷ এর একমাত্র ব্যতিক্রম নেতাজী সুভাষ” বললেন ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা হরিপদ বিশ্বাস৷ নেতাজীর প্রতি এখন কেন মোদীর এত ভক্তি? এককালে হিন্দুমহাসভা, পরবর্তীকালে সংঘ পরিবার এবং বিজেপি তারই বাই-প্রোডাক্ট বা ডাইরেক্ট প্রোডাক্ট৷ তাহলে শুরুতে তাদের ভূমিকাটা কী ছিল ? শুধু মোদী নন, প্রয়াত অটল বিহারি বাজপেয়ির ভূমিকা কী ছিল? বাজপেয়ি একবার নেতাজীকে সম্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী বলে৷ তিনি ছিলেন তখন দশ নম্বরে৷ তার আগে দশটি দেশ আজাদ হিন্দ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ দুর্ভাগ্য আমাদের নেতাজীকে আমরা যথাযোগ্য সন্মান দিইনি৷”
এবছর আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই অতি ভক্তির পেছনে কি ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতি কাজ করছে ? উত্তরে ফরোয়ার্ড ব্লক নেতা বললেন, ‘‘অবশ্যই আছে৷ ক্ষমতায় আসার আগে এক রাজনীতি, ক্ষমতায় টিকে থাকতে আরেক রাজনীতি৷ নেতাজীকে তো আমরা ক্ষমতায় আসতে দেখিনি৷ দেখেছি রণাঙ্গনে৷ অখন্ড স্বাধীন ভারত গড়ে তুলতে, যার পরিধি আজকের পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত৷ কিন্তু আজ আমরা কী দেখছি? দেখছি লক্ষ লক্ষ লোক আজও অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত৷ আটক শিবিরে বন্দি৷ এই ভন্ডামি চেপে রাখা যাবে না৷ নেতাজীকে যদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সন্মান দেওয়া হয়, তাহলে তার সীমানা অখন্ড ভারত৷” DW