আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে বিপন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক কচ্ছপ পাচার করতে গিয়ে এক ব্যক্তি পরপর ন’বার ধরা পড়ার পর আন্তর্জাতিক একটি সংগঠন অভিযোগ করেছে ভারত সরকার ওই অঞ্চলের আদিম অধিবাসী ও উপজাতিদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সারা দুনিয়া জুড়ে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে থাকে লন্ডন-ভিত্তিক সংস্থা সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল, তারা বলছে পাচারকারীরা যেভাবে সংরক্ষিত জারোয়া উপজাতিদের এলাকায় অবাধে ঢুকে পড়ছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
এর আগে স্থানীয় পত্রিকা ‘আন্দামান ক্রনিকল’-এর খবরে বলা হয়, সি টার্টল বা সামুদ্রিক কচ্ছপ পাচার করতে গিয়ে গত মাসে নারায়ণ রায় ওরফে সুজয় এবং সুরজিৎ দাস নামে দুই ব্যক্তি দক্ষিণ আন্দামান পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।
তাদের কাছ থেকে ব্যাগে ভরা অবস্থায় সি টার্টলের দেহও উদ্ধার করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এই চোরাই কচ্ছপ বা তাদেরে দেহের বিভিন্ন অংশ চড়া দামে বিক্রি হয়।
তবে নারায়ণ রায়ের এটাই প্রথম পাচারের ঘটনা নয়। জারোয়াদের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়া, বিপন্ন প্রাণী পাচার করা ও জারোয়াদের হুমকিতে ফেলার জন্য তার বিরুদ্ধে অগ্রব্রজ ও কদমতলা থানাতে আগেও অন্তত নবার মামলা হয়েছে।
আন্দামানের পুলিশ তাকে বর্ণনা করছে একজন ‘হ্যাবিচুয়াল পোচার’ বা স্বভাগত চোরাশিকারি বলে।
এই খবর সামনে আসার পরই দক্ষিণ আন্দামানে জারোয়াদের জন্য উদ্বেগ জানিয়েছে সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল।
ওই সংস্থার অধিকর্তা স্টিভেন কোরি বলেছেন, “জারোয়াদের জন্য সংরক্ষিত অঞ্চলে চোরাশিকার একটি কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ – তাতে জেল ও জরিমানা দুটোই বাধ্যতামূলক। তার পরেও এই ব্যক্তি কীভাবে নবার ধরা পড়ার পরেও প্রতিবারই ছাড়া পেয়ে গেল, সেটা বিস্ময়জনক।”
আন্দামানের এই জারোয়া উপজাতিদের সঙ্গে সভ্য মানুষদের সংস্পর্শ প্রায় নেই বললেই চলে। ১৯৯৮য়ে তাদের দ্বীপের কাছে বসতি স্থাপন করা কিছু মানুষের সঙ্গে শুধু তাদের সামান্য যোগাযোগ আছে।
বহিরাগতদের কাছ থেকে জারোয়ারা সহিংসতা বা যৌন শোষণের শিকার হতে পারে কিংবা এমন রোগের সম্মুখীন হতে পারে যার বিরুদ্ধে তাদের কোনও প্রতিরোধ জানা নেই – আর সেই আশঙ্কাতেই তাদের এলাকায় বাইরের লোকের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
জারোয়া রিজার্ভ বা নর্থ সেন্টিনেল আইল্যান্ডের আশেপাশে যে সমুদ্র বা জঙ্গল আছে সেখান থেকে আহরণ করা খাবার খেয়েই তারা দিন কাটায়।
ধারণা করা হয়, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এখনও এমন কিছু উপজাতি আছে যাদের সঙ্গে সভ্য সমাজের এখনও কোনও রকম যোগাযোগই স্থাপিত হয়নি।
কিন্তু জারোয়া রিজার্ভে চোরাকারবারিরা যেরকম ঘন ঘন হানা দিচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে, তাতে আন্দামানের উপজাতিরা আর আদৌ সুরক্ষিত নয় বলেই অ্যাক্টিভিস্টরা মনে করছেন।