কোন ব্যক্তি যদি পশু, ফুল, শিশুর প্রতি প্রেম রাখেন, সেক্ষেত্রে একবারেই তার অন্তর বোঝা যায়। জয়া আহসান, এপার বাংলার শ্রীলেখা মিত্র, গায়ক ইমন চক্রবর্তী এরা তেমনই মানুষ। এ নিয়ে এবার পুরস্কৃত করা হলো অভিনেত্রী জয়া আহসানকে। প্রাণবিক বন্ধু পুরস্কার পেলেন তিনি।
মোট ১১ জনকে দেয়া হয়েছে প্রাণবিক বন্ধু পুরস্কার। এর মধ্যে জয়া আহসান এই সম্মাননা পেয়েছেন প্রাণবিক তারকা বিভাগে। প্রাণীর প্রতি ভালোবাসার স্বীকৃতি পেলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। ভূষিত হলেন ‘প্রাণবিক বন্ধু’ সম্মাননায়।
জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে শনিবার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে জয়া আহসানের হাতে তুলে দেয়া হয় এই পুরস্কার।
জয়াসহ মোট ১১ জনকে দেয়া হয়েছে প্রাণবিক বন্ধু পুরস্কার। অন্যরা হলেন প্রাণবিক প্রজন্মে মো. আবু বকর সিদ্দিক (পথপ্রাণী উদ্ধারকর্মী), পথে পথে প্রাণ রক্ষায় রাজশাহীর সুধা রানী এবং ঢাকার প্রেসী পুষ্পিতা সরকার। প্রাণবিক প্রাণী চিকিৎসক ডা. ফাতিহা ইমনুর ইমা, গণমাধ্যমে প্রাণবিকতায় প্রবীর কুমার সরকার, ভেটেরিনারি শিক্ষা ও চিকিৎসায় প্রফেসর নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ, জনস্বাস্থ্য ও পথপ্রাণী রক্ষায় বেনজির আহমেদ, প্রাণবিক বন সংরক্ষক মোল্যা রেজাউল, প্রাণবিক নগর পিতা আতিকুল ইসলাম এবং বিশেষ মরণোত্তর সম্মাননা রেশাদ কামাল।
জয়া আহসান তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন: “আমি বিরাট কোনো সম্মাননার যোগ্যতায় গিয়ে পৌঁছাতে পেরেছি, সে রকম করে নিজেকে কখনো ভাবতেই পারিনি। তারপরও দেশেবিদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিছু কিছু সম্মাননা আমাকে জানিয়েছেন, তা নিশ্চয়ই তাদের ভালোবাসার জোরে। কিন্তু যে সম্মাননা ‘প ফাউন্ডেশন’ আমাকে দিলেন, সেটা আমার হৃদয়ের একেবারে গভীরের একটা বিষয়ে। তাদের দেওয়া ‘প্রাণবিক বন্ধু’ সম্মাননায় আমি অসম্ভব বিহ্বল।
মানুষ প্রকৃতির সন্তান। আবার মানুষ প্রকৃতিকে ছাপিয়েও উঠেছে। চেতনা পেয়েছে বলেই আমরা নেহাত জীব হয়ে থাকিনি। আমরা মানুষ হয়ে উঠেছি। আমরা স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন অর্জনের জন্য জীবন বাজি রাখি, অন্যকে ভালোবেসে নিজেকে বিলিয়ে দিই, ভবিষ্যতের মানুষের জন্য নিজেকে সংযত রাখি। তাই আমাদের দায়িত্ব আছে। মানুষ হিসেবে প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্যের প্রতি আমাদের এ দায় জন্মগত। আমরা সেটি ভুলে যেতে পারি না। আমরা প্রকৃতিকে ছাপিয়ে উঠেছি, কিন্তু প্রকৃতিকে পার হয়ে যাইনি। সেটা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এই পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখার দায় আমাদের।
পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখার একটাই উপায়—আমাদের রিপু শাসন করে, আমাদের রাক্ষুসে খিদে কমিয়ে পৃথিবীকে সবুজ করে রাখা। সবুজ মানে গাছ, প্রাণী আর মানুষের একাকার পৃথিবী। পৃথিবীকে সবুজ করে রাখা, কথাটা শুনতে সহজ; কিন্তু এর দায় অনেক বড়, প্রত্যেকের এবং কঠিন। আমার, আপনার, সমাজের, সরকারের, পৃথিবীর বড় বড় করপোরেশনের, বিশ্বনেতাদের। আমাদের কোনো কোনো প্রাণী অরণ্যবাসী। কোনো কোনো প্রাণী নাগরিক, মানুষের মমতার ওদের জীবন বেঁচে আছে।
করোনার দুঃসময়ে কুকুরের, বেড়ালের, ঘোড়ার মতো নাগরিক এই প্রাণীদের শোচনীয় দুর্দশা আমরা দেখেছি। আমরা না দেখলে ওরা বেঁচে থাকবে না। এখানে আমাদের দায়িত্ব আছে। আমাদের দেশে বাণিজ্যমুখী বনবিভাগ আছে, কিন্তু পরিবেশমুখী প্রাণীমুখী প্রাণসম্পদ বিভাগ নেই। আমি এটি প্রতিষ্ঠার দাবি করছি। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের জন্য পৃথিবীকে নিশ্বাস ফেলার উপযোগী করে রেখে যেতে চাই, তাহলে পৃথিবীর যে মৃত্যুঘণ্টা ক্ষীণভাবে বাজছে, তার আওয়াজ সবাই কান পেতে শোনার চেষ্টা করুন। ‘প ফাউন্ডেশন’কে ধন্যবাদ। আপনাদের সবাইকে ভালোবাসা”।
উল্লেখযোগ্য যে, বেশ কিছুদিন দেশের বাইরে থেকে শনিবার সকালে দেশে ফেরেন জয়া আহসান।