মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সম্প্রতি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক ও বর্তমান ছয় কর্মকর্তা ও বাহিনীটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ। বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এবং এ-সংক্রান্ত করণীয় নিয়ে আলোচনার জন্য ব্যাংকগুলোর প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ পরিপালন কর্মকর্তারা (ক্যামেলকো) আজ এক জরুরি বৈঠকে বসছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা
জানা গেছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব ও করণীয় নিয়ে আলোচনার জন্য ব্যাংকগুলোর ক্যামেলকোরা আজ এক বৈঠকে বসতে পারেন। এছাড়া ব্যাংকগুলো এখন নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্তদের নামে কোনো কার্ড ইস্যু করা হয়েছে কিনা, সেটিও খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। তবে দেশের জন্য স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় এক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানায়, এ নিষেধাজ্ঞায় উল্লিখিত বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ ইও.১৩৮১৮-এর আওতাভুক্ত করা হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জারীকৃত ওই আদেশের আওতাভুক্তদের বিশ্বব্যাপী মার্কিন আর্থিক নেটওয়ার্ক থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করার কথা বলা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের কোথাও ভিসা, মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্সসহ মার্কিন আর্থিক নেটওয়ার্কের অধীন কোনো কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন না উল্লিখিত সাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।
সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত দেশের সাত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোনো ধরনেরই আর্থিক পরিষেবা ব্যবহার করতে পারবেন না। এমনকি দেশে বা বিদেশে কোথাও ব্যাংক খাতের ভিসা, মাস্টারকার্ড বা আমেরিকান এক্সপ্রেসের (অ্যামেক্স) মতো মার্কিন কার্ড পরিষেবা ব্যবহারেরও আর কোনো সুযোগ থাকছে না তাদের।
এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন ব্যক্তিদের নামে ইস্যুকৃত কার্ডগুলো বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে যাচ্ছে র্যাবও। ডলারে রূপান্তরযোগ্য কোনো ঋণপত্র খুলতে পারবে না বাহিনীটি। তবে র্যাবের কর্মরত সদস্যরাও ভিসা-মাস্টারকার্ডের মতো মার্কিন আর্থিক সেবাগুলো থেকে বঞ্চিত হবেন কিনা, সেটি নিয়েও আলোচনা চলছে। এ প্রসঙ্গে ট্রেজারি বিভাগের সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য না থাকায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাংকারদের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি জানার জন্য ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার অপেক্ষা করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ড ইস্যুর মাধ্যমে সারা বিশ্বের আর্থিক পরিষেবার উল্লেখযোগ্য অংশ দখলে রেখেছে ভিসা, মাস্টারকার্ড ও অ্যামেক্স। দেশেও ব্যাংক খাতের ইস্যুকৃত কার্ডগুলোর প্রায় ৯৮ শতাংশই মার্কিন এসব পরিষেবাভিত্তিক।
নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের ১০ ডিসেম্বর জারীকৃত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এর আওতাভুক্ত কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রে নিজ নামে কিংবা সেখানকার স্থানীয় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের জিম্মায় কোনো সম্পত্তি থাকলে তা জব্দ হবে। বিষয়টি অফিস অব ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোলকে (ওএফএসি) অবহিত করতে হবে। এছাড়া ওএফএসির বিশেষ অনুমতি বা অন্য কোনো ছাড় না থাকলে মার্কিন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞার আওতাধীনদের সঙ্গে লেনদেনও করতে পারবে না।
ব্যাংকাররা বলেন, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের ওয়েবসাইটে নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যাংকের ভূমিকা কী হবে, সে-সংক্রান্ত আইনকানুনও সংশ্লিষ্ট বিভাগ খতিয়ে দেখছে।