কমিউনিটি নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে পাঁচ বিশিষ্ট বাঙালির নামে পাঁচটি ভবনের নামকরণের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। তারা হলেন কবি সুফিয়া কামাল, সমাজসেবক তাসাদ্দুক আহমেদ এমবিই, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং লন্ডনের প্রয়াত সাংবাদিক শাহাবউদ্দিন আহমেদ বেলাল।
এছাড়া পূর্ব লন্ডনে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রতীক আলতাব আলীর নামেও একটি ভবনের নামকরণ করা হচ্ছে। সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে তাদের নাম ঘোষণা করেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নির্বাহী মেয়র জন বিগস। তিনি বলেন, এই ভবনগুলোর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এর মধ্যে চারটি ভবনের নির্মাণকাজ চলতি বছরের মধ্যে শেষ হবে। শুধু বেলাল হাউজের নির্মাণকাজ শুরু হতে কিছু সময় লাগবে।
মেয়র জন বলেন, পূর্ব লল্ডনের ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই পাঁচ ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা জানানোর মধ্য দিয়ে সেই ইতিহাস এবং পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশি অভিবাসীদের সার্বিক অবদানকেই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বহু জাতিসত্ত্বার এই সমাজে মানুষ যেন শিকড়কে ভুলে না যায়, এজন্য আমরা এটা করছি। কমিউনিটির কণ্ঠস্বর হয়ে থাকবে তা। ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃত্বে যে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে, এটা সেটারই পরিচয় বহন করছে।’
যে পাঁচজনকে এই সম্মাননা দিয়েছে টাওয়ার হ্যামলেটস কর্তৃপক্ষ; তাদের অবদানের কথা তুলে ধরা হয় এই সংবাদ সম্মেলনে।
কবি সুফিয়া কামাল
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দিশারির ভূমিকা পালন করেন কবি সুফিয়া কামাল। নারী প্রগতি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও ছিল তার অসামান্য ভূমিকা। ১৯৯১ সালে মারা যান এই প্রথিতযশা কবি। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম নারী, যাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
তাসাদ্দুক আহমেদ এমবিই
তাসাদ্দুক আহমেদ ছিলেন ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটির পিতৃতুল্য ব্যক্তিত্ব। এর অগ্রযাত্রায় তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তার হাত ধরে বহু সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়। দেশের ডাক এবং ইন্টার্ন নিউজ নামে দুটি সংবাদপত্র প্রকাশ করেন তাসাদ্দুক। সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৯ সালে তাকে রানির সম্মাননাসূচক খেতাব এমবিই দেয়া হয়। এছাড়া ২০০০ সালে টাওয়ার হ্যামলেটসের ফ্রিডম অব দ্য বারা সম্মান অর্জন করেন তিনি।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নাম বেশ পরিচিত। বিলেতের বাঙালি কমিউনিটির সেবায়ও বিশেষ ভূমিকা রাখেন তিনি। একসময় টাওয়ার হ্যামলেটসের শিক্ষা বিভাগে কাজ করেছেন।
শাহাবউদ্দিন আহমেদ
সাংবাদিকতার পাশাপাশি শাহাবউদ্দিন আহমেদ বেলাল ব্রিটেনে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। তিনি এক সময় স্টেপনি গ্রিন এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবেও কাজ করেন।
আলতাব আলী
সাধারণ অভিবাসী শ্রমিক আলতাব আলী মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পূর্ব লন্ডনে বর্ণবাদ ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হন। তিনি ১৯৭৮ সালে বর্ণবাদী হামলায় প্রাণ হারান। তার মৃত্যুর পর প্রায় সাত হাজার মানুষ কফিন বহন করে যান মধ্য লন্ডনে। হাইড পার্ক, ট্রাফালগার স্কোয়ার এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে তারা বিক্ষোভ করেন।
লন্ডনের শ্বেতাঙ্গ, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও ক্যারিবীয় অভিবাসী আন্দোলনকারীরাও এই আন্দোলনে যোগ দেন। হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় আলীর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি পার্কে রয়েছে লন্ডনের ভাষা শহীদ মিনার।





