আরাকান ডেস্ক: মিয়ানমারের জনগণের ওপর সহিংসতা বন্ধ করে দ্রুত বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠায় দেশটির জান্তার ওপর চাপ জোরালো করতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। স্থানীয় সময় শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাশেলেট এ আহ্বান জানান। খবর এএফপির।
মিয়ানমারে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। গ্রেপ্তার করা হয় অং সান সু চিসহ তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) শীর্ষ নেতাদের। অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার ইতি টানা হয়। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘাত এবং অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে।
দিনটিকে সামনে রেখে শুক্রবার মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানান জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল ব্যাশেলেট। তিনি বলেন, সেনা অভ্যুত্থানের এক বছরে মিয়ানমারের জনগণকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। তাদের জীবনযাপন ও স্বাধীনতার ওপর প্রভাব পড়েছে। তিনি মনে করেন সংকটের সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক এ হাইকমিশনার আরও বলেন, মিয়ানমারে মানবাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ও নতুন করে প্রচেষ্টা শুরু করার এখনই সময়। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালু রাখতে জান্তাকে বোঝানোর জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনসের পক্ষ থেকে খুব বেশি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি উল্লেখ করে আক্ষেপ জানান ব্যাশেলেট। তিনি বলেন, মিয়ানমারে নাগরিক স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলার সময় এসব মানুষ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন তাঁদের ছেড়ে না যায়।
ব্যাশেলেট বলেন, ‘আমি এ অঞ্চলের ও বাইরের বিভিন্ন দেশের সরকার ও অন্যদের প্রতি এ আকুতি শোনার আহ্বান জানাচ্ছি।’
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের পর থেকে ভিন্ন মতাবলম্বী মানুষদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালাতে গিয়ে কমপক্ষে দেড় হাজার মানুষকে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী। বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়া সশস্ত্র সংঘাত ও সহিংসতায় আরও অনেকে নিহত হয়েছেন।
সেনাবাহিনীর বিরোধিতার জন্য কমপক্ষে ১১ হাজার ৭৭৮ জনকে নির্বিচার আটক করা হয়েছে। নিরাপত্তা হেফাজতে রয়েছেন ৮ হাজার ৭৯২ জন।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয় আরও বলেছে, বন্দী অবস্থায় অন্তত ২৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের অনেকে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর মানবাধিকার পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তার বিস্তারিত উল্লেখ করে আগামী মার্চে ব্যাশেলেটের কার্যালয় থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের কথা রয়েছে।