স্বাস্থ্যকর পানীয়ের প্রসঙ্গ এলে প্রথমেই বলতে হবে গ্রিন টি এর কথা। কেননা গ্রিন টি হলো এমন এক সতেজ পানীয় যা ক্যালরি বা কৃত্রিম অ্যাড-ইন ছাড়াই স্বাস্থ্যকর সুবিধা দিয়ে থাকে। গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েরই গ্রিন টি পান করার মাধ্যমে নিজেকে সতেজ রাখার ইচ্ছা জাগতে পারে, তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অথবা অনেকে পানি পানের বিকল্প হিসেবে গ্রিন টি পান করাকে বেছে নিতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় গ্রিন টি সম্পূর্ণ নিরাপদ। গর্ভাবস্থায় হাইড্রেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এক্ষেত্রে গ্রিন টি অবদান রাখতে পারে। তবে গর্ভাবস্থায় থাকা মানে আপনার সাথে অন্য একটি জীবন জড়িয়ে থাকা। তার স্বাস্থ্যের ব্যাপারেও আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
গর্ভে থাকা শিশুর বেড়ে ওঠার সময় পানীয়ের ব্যাপারে যে বিষয়গুলো জেনে রাখা প্রয়োজন
নিউ ইয়র্কের একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন যেকোনো সময় মহিলাদের গ্রিন টি পানের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কোনো কারণ নেই। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে যে সামগ্রিক ক্যাফেইন গ্রহণে তা কতটুক অবদান রাখে। যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অফ অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টরা গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রামের নিচে ক্যাফেইন খাওয়ার পরামর্শ দেয়।
গ্রিন টি এর প্রতি কাপে প্রায় ২৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে তাই প্রতিদিন নির্দ্বিধায় কয়েক কাপ গ্রিন টি অনায়াসেই পান করতে পারেন। তবে কফি পানের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে কেননা কফিতে ক্যাফেইন বেশি থাকে। গ্রিন টিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফ্ল্যাভোনয়েড এবং পলিফেনলসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিজ্জ যৌগ রয়েছে। এই পুষ্টি উপাদানগুলো গর্ভাবস্থা এবং তার পরেও স্বাস্থ্যকর সুবিধা প্রদান করে।
তবে প্রতিটি গর্ভাবস্থা আলাদা। গর্ভবতী অবস্থায় গ্রিন টি পান করার বিষয়ে কোনো কিছু জানার থাকলে আপনার পরিস্থিতি সম্পর্কে একজন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে পরামর্শ করতে ভুলবেন না।
গর্ভাবস্থায় গ্রিন টি শিশুর জন্য কতটা নিরাপদ?
চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরামর্শ অনুযায়ী বা সুপারিশকৃত গর্ভাবস্থায় দৈনিক ক্যাফেইন গ্রহণের মাত্রা ছাড়ানোর আগ পর্যন্ত গ্রিন টি পান করা আপনার শিশুর জন্য নিরাপদ। তবে ক্যাফেইন গ্রহণের মাত্রা অতিক্রম করা শিশুর ওজন কম হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
গর্ভাবস্থায় গ্রিন টি এর উপকারিতা
ক্যাফেইনের সাথে আসা হাইড্রেশন এবং শক্তি বৃদ্ধি ছাড়াও, গ্রিন টি’তে থাকা উদ্ভিজ্জ যৌগগুলো গর্ভাবস্থার আগে, গর্ভাবস্থায় এবং গর্ভাবস্থার পরে স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। ‘ক্যাটেচিন’ গ্রিন টিতে থাকা চিকিৎসাগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ যৌগ যে বিষয়ে গত কয়েক দশক ধরে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে গবেষণা করা হচ্ছে। ক্যাটেচিন টিউমার গঠনে বাধা দেয়, ইমিউন সিস্টেমকে সমর্থন করে এবং রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে যা প্রিক্ল্যাম্পসিয়ার মতো গর্ভাবস্থার জটিলতা এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ।
এপিগালোক্যাটেচিন গ্যালেট (ইজিসিজি) নামক এই ক্যাটেচিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী একটি, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে, হৃদযন্ত্রের প্রদাহ কমায় এবং কোলেস্টেরল-২ কমায়। গবেষণায় ইজিসিজি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং বিপজ্জনক ফ্যাটি টিস্যুর মাত্রা কমাতেও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডায়াবেটিস ধরন ২ এবং ৩ হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করার পাশাপাশি শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতেও সাহায্য করে।
গ্রিন টিতে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড এল-থেনাইনের জন্য মানসিক চাপ বা উদ্বেগ কমাতে গ্রিন টি কার্যকর। বিশেষজ্ঞ ডাকক্তাররা বলছেন, যাদের কাছে গর্ভাবস্থায় গ্রিন টি পান করলে রক্তচাপ বা বমি বমি ভাবের জটিলতা দূর হয় বলে মনে হয় তারা যেন এটি পান করা চালিয়ে যান। তবে মনে রাখতে হবে এক কাপ গ্রিন টিতে ২৫ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। আর একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য দৈনিক ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন গ্রহণের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই গর্ভাবস্থায় ১০ কাপের বেশি গ্রিন টি পান করা ক্ষতিকর। তাই গর্ভাবস্থায় চা বা কফি জাতীয় পানীয় পান করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ না করা হয়। বেশি মাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণ গর্ভের শিশুর ওজন কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।