পশ্চিমবঙ্গ নিউজ ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর থেকে গত ১৪ মে সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হন পি কে হালদার। সেদিনই তাদের আদালত থেকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় আর্থিক বিষয়ক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
এরপর ১৭ তারিখ তাদের কলকাতার আদালতে তোলা হলে আবারও ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পাশাপাশি সহযোগী আমানা সুলতানাকে আরও ১০ দিনের জন্য কারাগারে পাঠায় আদালত। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে টাকা পাচারের অভিযোগ এনেছে ইডি।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের ‘চিটফান্ড’ সারদা কাণ্ডের পর এত বড় টাকা আত্মসাতের ঘটনা দেখা যায়নি। বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, টাকার অংকটা সাড়ে তিন হাজার কোটি।
ইডির আইনজীবী অরিজিত চক্রবর্তী বলেছেন, একাধিক দেশের নাগরিকত্ব আছে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের। তাদের মোবাইল-ল্যাপটপ খুলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এক সূত্র মারফত জানা গেছে, সব মিলিয়ে পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের আলোচিত সারদাকাণ্ডে সুদীপ্ত সেনের টাকা আত্মসাতের অংকটা ছিল সাড়ে তিন হাজার কোটি রুপির বেশি। ফলে এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদার এক আলোচিত নাম।
প্রাথমিকভাবে ইডির ধারণা, পশ্চিমবঙ্গে শাসকদলের ছত্রছায়ায় থাকায় পি কে হালদারের এত বাড়বাড়ন্ত। ফলে তাকে নিয়ে প্রভাবশালী মিডিয়াগুলো সংবাদ করছে না। অপরদিকে কলকাতার রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের সহযোগিতা এবং অসাধু বাংলাদেশিদের যোগসাজশ আছে। তাই তারা পশ্চিমবঙ্গে শান্তিতে বাস করতে পারছে।
বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের মতে, এটা নতুন ঘটনা নয়, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। শাসকদলের মদতে শেষ হয়ে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ। ফলে প্রশাসনিক আইনশৃঙ্খলার অভাব দেখা দিয়েছে রাজ্যটিতে।
শমীক বলেন, বর্তমানে ইডি যাকে গ্রেফতার করেছে তাকে বলা হচ্ছে ‘বড় ফ্রড’। তিনি অশোকনগরে গেলেন, প্রসাদসমান বাড়ি তুললেন, বাগান বাড়ি কিনলেন, পশ্চিমবঙ্গে ব্যবসা পেতে বসলেন, কিন্তু স্থানীয় এবং রাজ্য প্রশাসন এ বিষয়ে কিছুই জানে না। এটা আমাদের বললেই আমরা মেনে নেব? প্রশাসনের কারোর সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলে এত বড় ঘটনা ঘটতে পারে না। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি।
তিনি আরও বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও উন্নতি ঘটাতে হবে। বাংলাদেশ সরকারকে বিষয়টি বোঝাতে হবে। কারণ এখান থেকেই বাংলাদেশি জঙ্গিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুন করার চক্রান্ত করে। তারা ধরা পড়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনিরাও ধরা পড়েছে। বাংলাদেশের অনেক অপরাধী এখানে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে।
কলকাতার তরুণ প্রজন্মের বাম নেতা সৃজনী বলেন, এ বিষয়ে আমরা অশোকনগরে মিছিল করেছি। বলেছিলাম অশোকনগরকে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে। আগামীতে ভারতের জনগণনা আছে। আমরা অপেক্ষা করছি সেই গণনার জন্য।
তিনি আরও বলেন, পি কে হালদারের মতো লোকেদের কোনো দেশ হয় না। তারা সুবিধাবাদী। যেখানে সুবিধা পাবে সেখানেই থাকবে। তবে বাংলাদেশিরা যে অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে এ কথা ঠিক নয়। পশ্চিমবঙ্গে মমতার ছত্রছায়ায় ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড অর্থাৎ নাগরিক নথি পাওয়া খুব একটা অসম্ভব নয়।
এ সময় তার সঙ্গে থাকা দিলীপ ঘোষ দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে ১ কোটি বাংলাদেশি রয়েছেন। জনগণনা হলে বিষয়টি সামনে এসে যাবে।
পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী ও উত্তর ২৪ পরগনার হাবরার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছিলেন, আইন আইনের পথে চলবে। এখানে কাউকে রেয়াত করা হবে না। যিনি এ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবেন, তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
যদিও পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে নাগরিক নথি তৈরির যে অভিযোগ উঠেছে তা মানতে চাননি বনমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি কোন আলটপকা মন্তব্য করতে পারি না। তথ্য জেনে তারপর মন্তব্য করতে পারি। কারণ আমি একজন মন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি বলেন, পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের ফেরত পাঠাতে শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে।