।। মোমিনুর রহমান মনির ।।
নামিদামি নেতারা আইন বানান! বাহবা পান, সাংবাদিকেরা ছবি তোলেন, লেখকেরা লিখে ভারি করেন পান্ডুলিপির ওজন। কিন্তু এসব করেও কি সুবিধাবঞ্চিতদের কোনো পরিবর্তন হয় আদৌ। ওদের রোদ পোড়ায়! বৃষ্টি ভেজায়!
ঝড়ো হাওয়া ওদের স্বপ্নগুলোকে ধুলোয় ধুসরিত করে দেয়। এভাবেই দিন কাটে অবহেলিতদের কিন্তু ওরাও তো মানুষ নাকি? ওরাও তো বাঁচতে চায়? মানুষ হয়ে বাঁচতে চায়!
বলছি ডা. ফারহানা মোবিনের লেখা সামাজিক সমস্যা ও তার জন্য সচেতনতা বিষয়ক বই- ‘আমিও মানুষ’ থেকে কিছু কথা।
লেখক বইটিতে সমাজের সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা কিছু সামাজিক সমস্যা ও তার প্রতিকার বিষয়ে কখনো সরাসরি আবার কখনো রূপক অর্থে ব্যবহার করে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন।
ঝকঝকে কাভার উল্টালেই প্রথমে চোখে পড়ে বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাজারো তরুণের ভালোবাসার সংগঠন ‘বন্ধুসভার’ সব বন্ধুদের। যাদের রক্তে প্রবাল দেশপ্রেম, হৃদয়ে পরোপকারের তীব্র ইচ্ছা, দু’চোখে পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজানোর স্বপ্ন।
শুরুতেই লেখিকা একজন বাদাম ওয়ালার জীবনের গল্প তুলে ধরে লিখেছেন- ‘আমি এক বাদামওয়ালা’ এরপর যৌতুকের জন্য সমাজের কিছু মুখোশধারী মানুষের ভয়ানক লালসাবোধ নিয়ে লেখা- ‘ধূসর জীবনের গল্প’ বৃদ্ধাশ্রমের নেতিবাচক দিক নিয়ে লেখা- ‘সাধের বৃদ্ধাশ্রম’ আমাদের দেশে চাইল্ড কেয়ার হোমের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে লেখা- ‘চাই চাইল্ড কেয়ার হোম’।
এরপর পর্যায়ক্রমে- জীবিকার তাগিদে অফিসের চরিত্রহীন বসের সঙ্গে কাজ করতে বাধ্য হওয়া, মাদকাসক্ত নারীদের সঠিকভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থাহীনতা, পিতা-মাতার জন্য আমাদের করণীয়, কিশোর শ্রমিকের আহাজারি…বইটিতে লেখিকা এ ধরনের সামাজিক সমস্যাগুলোর করুণ চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।
যেসব পেশাতে নারীদের নাইট ডিউটি করতে হয় (যেমন- চিকিৎসক, সেবিকা, পাইলট, বিমানবালা), সেসব নারীদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিক চাপের মুখে পড়তে হয়। এই নেতিবাচক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সব নারী সফল হতে পারেন না। নারীরা যদি পুরুষের মতোই এগিয়ে যেতে পারে, তাহলে বদলে যাবে পুরো সমাজ। এজন্য দরকার সমাজের মানুষের সচেতনতাবোধ। দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
দেশের উন্নয়নের জন্য নারী পুরুষকে সমানভাবে এগিয়ে যেতে হবে, লেখক এই বিষয়টি পাঠককে উপলব্ধি করানোর চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি মানুষ যেন সামাজিক সমস্যাতে হতাশ না হয়ে, সামনে এগিয়ে যেতে পারে, সেজন্য কিছু সফল ও হৃদয়বান মানুষের জীবনী ছোট করে লিখেছেন।
যারা ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা, দুঃখ কষ্ট আর অভাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সফল হয়েছেন। যেমন- পৃথিবী বিখ্যাত লেখক জে কে রাওলিং, টাংগাইলের কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা রণদা প্রসাদ সাহা।
জীবনের প্রতিটি ধাপেই মানুষকে পোড়াতে হয় অনেক কাঠ-খড়। এই কাঠ-খড় পুড়িয়ে কেউ হয় জয়ী। আর কাঠ খড়ের সঙ্গে কেউবা নিজেই পুড়ে হয়ে যায় ছারখার। নিজেকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন সীমাহীন অনুপ্রেরণা, সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পাহাড়সম মানসিক শক্তি, বাঁধভাঙা স্বপ্ন, মানবপ্রেম আর দেশপ্রেম।
বইটি সামাজিক সমস্যা ও তার জন্য সচেতনতা বোধের বাস্তব প্রতিফলন। বইটি খুব সাধারণ ও সহজ ভাষায় লেখা। হতাশার সাগরে ডুবে থাকা কেউ এই বইটি পড়লে খুঁজে পাবেন মানসিক শক্তি। আমিও ‘মানুষ’ বইটি লিখেছেন ড. ফারহানা মোবিন।