শিরোনাম
শুক্র. ডিসে ৫, ২০২৫

অভিবাসীদের নেতিবাচক প্রচার মোকাবিলায় ‘অভিবাসী কূটনীতি’ চালু করছে সরকার

বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী ও অভিবাসী বাংলাদেশিদের ‘নেতিবাচক প্রচার–প্রচারণা’ মোকাবিলা এবং দেশের ইতিবাচক দিকগুলো বিশ্বে তুলে ধরার জন্য ‘অভিবাসী কূটনীতি’ নামে নতুন একটি অধিশাখা করতে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনুবিভাগে এই অধিশাখা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এখানে একজন পরিচালকসহ দুজন সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে পদায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

‘অভিবাসী কূটনীতি’ অধিশাখা সৃষ্টির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগসহ অন্যান্য অংশীজনের কাছে প্রয়োজনীয় প্রস্তাব পাঠানোর কাজ শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিভিন্ন ডায়াসপোরাগুলোর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা মোকাবিলার জন্য মিশনগুলোর জোরালো ভূমিকা পালনের পাশাপাশি এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা সেল গঠন করার সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। পাশাপাশি এই সেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইতিবাচক দিকগুলো বিশ্ববাসীর কাছে ব্যাপকভাবে তুলে ধরারও সুপারিশ করেছিল সংসদীয় কমিটি। আজকের বৈঠকে এ বিষয়ে অগ্রগতি জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

কমিটির বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কমিটি দেশে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার লক্ষ্যে গঠনমূলক ও ইতিবাচক প্রবন্ধ, অনুচ্ছেদ প্রচার করার সুপারিশ করে।

আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে ব্যবস্থা নেওয়া দুরূহ

কমিটিতে দেওয়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতিবাচক অবদান রাখার পাশাপাশি প্রবাসী, অভিবাসী বাংলাদেশিদের অনেকেই বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারে লিপ্ত হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় তাঁদের সরব উপস্থিতি ও দেশবিরোধী আপত্তিকর মন্তব্য, বক্তব্য প্রচারের ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। অভিবাসীরা যেসব দেশে বসবাস করে এই কাজ করছেন, সেসব দেশের নানা আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ হয়ে পড়ে। বিষয়টি মোকাবিলা করার জন্য মন্ত্রণালয়ের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।

তাতে বলা হয়, দেশের বাইরে অবস্থান করে যাঁরা সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন এবং তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের একটি তালিকা ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ মিশনগুলোতে পাঠানো হয়েছে। তাদের সংশ্লিষ্ট দেশের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো সেসব দেশের সরকারগুলোর কাছে আবেদন জানাবে। এ কাজটি করার জন্য বাংলাদেশের মিশনগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই তৎপরতা অব্যাহত রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মিশনপ্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিদেশে অবস্থানকারী সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদানকারী এবং তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনারদের সে দেশের জন্য প্রযোজ্য আইন-কানুন চিহ্নিত করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী এসব ব্যক্তির কার্যক্রম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের পোস্টগুলো নিয়মিত নজরদারি করা এবং তা চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষকে জানানোর জন্য রাষ্ট্রদূতদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভালো কলামিস্ট খুঁজছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে গত আগস্টে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমিন ওই বৈঠকে বলেছিলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আর্টিকেল লেখার মতো দক্ষ জনবল না থাকায় সম্মানী দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কলামিস্টদের দিয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক আর্টিকেল লেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু ভালো আর্টিকেল লেখার মতো ভালো কলামিস্টের সংখ্যাও খুব কম। আগামী দেড় বছরে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী শক্তিগুলো সোচ্চারভাবে সমালোচনায় মেতে উঠতে পারে। তাই ভালো কোনো কলামিস্ট থাকলে তা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য তিনি অনুরোধ করেন।

ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেছিলেন, ইদানীং দেশের বাইরে বিভিন্ন ডায়াসফোরাগুলো ব্যাপকভাবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে। এটি মোকাবিলায় মিশনগুলোর জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, বাস্তবতা যদি ঠিক থাকে তাহলে যত নেতিবাচক প্রচার করা হোক, তা কাজে আসবে না। আবার বাস্তবতা ঠিক না থাকলে প্রচার করে তা বিশ্বাসযোগ্য করা যাবে না। এ ধরনের কাজে সরকারের যাওয়া উচিত হবে না। বরং সরকার যে কাজগুলো করছে সেগুলো এবং বাস্তব অবস্থা বস্তুনিষ্ঠভাবে যদি তুলে ধরা হয় তাহলে তা বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে। সূত্র: প্রথম আলো

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *