বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডিস। সংস্থাটি বলেছে, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উঁচু মাত্রার দুর্বলতা ও তারল্যের ঝুঁকি বিদ্যমান। সেই সঙ্গে চলমান সংকটের মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাও প্রকাশ পেয়েছে উল্লেখ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, উল্লিখিত কারণে বাংলাদেশের ঋণমান একধাপ কমিয়ে বিএ৩ থেকে বি১-এ নামিয়ে দিয়েছে মুডিস।
অবশ্য প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের জন্য তাদের পূর্বাভাস স্থিতিশীল রেখেছে। যদিও স্বল্পমেয়াদি ইস্যুয়ার রেটিংয়ের ক্ষেত্রে ‘নট প্রাইম’ মান অব্যাহত রাখার কথা জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, পরিস্থিতি খানিকটা সহজ হলেও বাংলাদেশে ডলার সংকট চলমান এবং বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে যাচ্ছে, যা দেশটির বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতির ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে আমদানির ক্ষেত্রে নানা ধরনের বাধা তৈরি হয়েছে। এর ফলে জ্বালানির ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
মুডিস আরও বলেছে, আমদানি নিয়ন্ত্রণে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হয়নি। একাধিক বিনিময় হার চালু এবং সুদের হার ঠিক করে দেওয়ার মতো অপ্রচলিত যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেখান থেকেও ফিরে আসেনি বাংলাদেশ। এসব পদক্ষেপ বিভিন্ন ধরনের বিকৃতি ঘটাচ্ছে।
পাশাপাশি অর্থনীতির আকারের তুলনায় কম রাজস্ব আদায়ের ফলে সরকারের পছন্দসই নীতি গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে টাকার অবমূল্যায়ন ও স্বল্প সময়ে অভ্যন্তরীণ ঋণের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ফলে সুদ বাবদ আরও বেশি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। ফলে ঋণ গ্রহণের সক্ষমতাকে দুর্বল করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
মুডিসের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, বিদেশি অর্থায়ন বৈদেশিক ও রাজস্ব সংক্রান্ত চাপ কিছুটা কমাতে সাহায্য করবে। তবে মহামারির আগের তুলনায় বৈদেশিক পরিস্থিতি দুর্বল থাকবে এবং উঁচু মাত্রার ঋণের কারণে রাজস্ব পরিস্থিতি দুর্বল হবে।
মুডিস মনে করছে, যেসব রাজস্ব সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন হতে অনেক বছর লেগে যাবে। মুডিস বলেছে, দেশটি কম সুদে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অর্থায়ন ও সহায়তা পেয়ে যাচ্ছে। ফলে বৈদেশিক ও রাজস্ব খাতে চাপ হালকা হবে বলে তারা মনে করছে।
মুডিস আরও বলেছে, বাংলাদেশের ঋণভার একই রকম অন্যান্য দেশের তুলনায় মাঝারি পর্যায়ে রয়েছে এবং কম সুদে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঋণ নেওয়ার কারণে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে।