শিরোনাম
বৃহঃ. ডিসে ৪, ২০২৫

কোটা সংস্কার আন্দোলন : শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের দফায় দফায় হামলা

স্টাফ রিপোর্টার

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর শাহবাগসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গতকাল রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গতকাল রোবার বিকেল ৩টায় অবস্থান নেয় শাহবাগ মোড়ে কিন্তু সময় বাড়ার সাথে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে যা পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছড়িয়ে পরে।

আন্দোলনকারীদের দাবি ৫৫℅ কোটায় নিয়োগের এই পদ্ধতি বৈষম্যমূলক এবং এটা সংস্কার করা দরকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম এবং পুলিশ বাহিনী তাদেরকে কয়েকবার আন্দোলন বন্ধ করে চলে যেতে বলে কিন্তু শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। রাত আটটার দিকে আন্দোলনকারীদের সরাতে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে এতে অসংখ্য সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হয় পরে

আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় ক্যাম্পাসের চারুকলা, কেন্দ্রীয় মসজিদ ও রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নেয় এবং রাস্তায় বেরিকেড দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। এ পর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন পুরো ক্যাম্পাস এলাকাতেই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে এরপরে পুলিশের সাথে ছাত্রলীগের কর্মীরাও যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের উপর একযোগে হামলা চালায়। রাতভর দফায় দফায় চলতে থাকে ওই সংঘর্ষ।

এদিকে টিএসসি এলাকায় শিবিরের ক্যাম্পাস অর্থ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল জাবির ও কবি জসিম উদ্দিন হলের সভাপতি কবির হোসেনকে পেয়ে তাদের ঘিরে ফেলে ছাত্রলীগের কর্মীরা। শিবির ওই আন্দোলনে ইন্ধন যোগাচ্ছে অভিযোগ করে তাদেরকে মারধর শুরু করে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। পরে অন্যান্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের বড় একটি দল এসে তাদেরকে ছাত্রলীগের থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে।

ছেলেদের হলগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের কর্মীরা ভয়ভীতি দেখিয়ে আটকে রাখার চেষ্টা করে কিন্তু মেয়েদের হলগুলোতে মেয়েরা গেটের তালা ভেঙ্গে রাস্তায় বেরিয়ে পরে এবং আন্দোলনে যোগ দেয়। পুলিশ ও ছাত্রলীগের রাতভর একের পর এক চালানো হামলায় সংবাদকর্মী, শিক্ষার্থীসহ অন্তত দেড়’শতাধিক আহত হয়েছেন। এর মাঝে গুরুতর আহত হয়েছেন ৯ জন। সাধারণ শিক্ষার্থী পরিষদের সদস্য মাহফুজ হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিবির শাখার অর্থ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল জাবির ও কবি জসিম উদ্দিন হলের শিবির সভাপতি কবির হুসাইনের অবস্থা আশংকাজনক। এছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এস এম হলের তরিকুল ইসলাম, সূর্যসেন হলের শুভসহ বাকিরাও চিকিৎসাধীন রয়েছেন।পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে এখন থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে । পুলিশ ও ছাত্রলীগের এই হামলায় আতংকিত হয়ে পরেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৯ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেপ্তার নেতাকর্মীরা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তার এবং ক্যাম্পাসে ছাত্রী লাঞ্ছনার প্রতিবাদে আজ আবারও রাজপথে নেমেছেন ছাত্রীরা। তবে ছাত্রলীগও পাল্টা কর্মসূচি পালন করেছে।কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। একই দাবিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *