গত শুক্রবার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের একটি রিপোর্ট দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এই প্রতিবেদনটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যেও এই রিপোর্ট নিয়ে দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। রিপোর্টটি প্রকাশের ২৪ ঘন্টা পর এখন পর্যন্ত এই নিয়ে কোনো পক্ষের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এই ব্যবসায়ীর বিভিন্ন ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ মনে করে, এদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না এবং এই সমস্ত সুবিধাবাদীরাই আওয়ামী লীগকে সংকটে ফেলছে। তারা এটাও মনে করেন যে, আওয়ামী লীগ এদের কাছ থেকে যত দ্রুত দূরে সরে যাবে- ততই ভালো। তবে আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতারা মনে করেন, এ রকম সময়ে এই রিপোর্টটি আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষতিকর হয়েছে। যারা এই রিপোর্টটি করেছে তারা আওয়ামী লীগের ক্ষতি করার জন্যই এ ধরনের রিপোর্ট করেছে। এর পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে। এখন এই রিপোর্টটি কেন?
আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এই প্রতিবেদনে যা কিছু বলা হয়েছে, তা সবাই জানেন। বিভিন্ন সময় এটা নিয়ে আলোচনাও হয়। কিন্তু এখন এই রিপোর্টটি প্রকাশের পেছনে অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে বলে তারা মনে করছেন। তবে আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশ মনে করছেন যে, এই রিপোর্টটি যথার্থ এবং সরকারের নীতিনির্ধারকরা এটিকে নেতিবাচকভাবে না নিয়ে যদি ইতিবাচকভাবে নেয়, তাহলেই সরকারের জন্য ভালো হবে। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এদের দায়-দায়িত্ব আওয়ামী লীগ কেন নেবে? এদের দায়-দায়িত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগ কেন জনগণের কাছে প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন? আওয়ামী লীগের অন্তত দুইজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেছেন, গত ১৫ বছরে কিছু সুবিধাবাদীরা আওয়ামী লীগের কাঁধে সাওয়ার হয়ে বিভিন্ন বদনাম করেছে। এদের কারণেই আওয়ামী লীগের সুনাম নষ্ট হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশকে যে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, দেশে যে ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ করেছেন, তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে মুষ্টিমেয় হাতে গোনা দুই একজন। এরা কখনোই আওয়ামী লীগের ছিলনা, দুঃসময়ে এদেরকে পাওয়া যাবে না।
অন্য একজন নেতা বলেছেন যে, যারা এই সমস্ত দুর্বৃত্তায়ন করছেন, তারাই গোপনে তারেক জিয়াকে অর্থ দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের ওই নেতা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তারেক জিয়া এবং বিএনপির আন্দোলনের জন্য এতো টাকা কোথায় পাচ্ছে?- সেই প্রশ্ন তুলেছেন। এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ। যারা অবৈধভাবে গত ১৫ বছরে বিত্ত-বৈভবে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, তারাই পরবর্তীতে তাদের অবৈধ সম্পদকে সুরক্ষিত রাখার জন্য গোপনে বিএনপির সাথে যোগাযোগ করছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তাদের কাছে এ ধরনের খবর আছে যে, কিছু কিছু ব্যবসায়ীক গ্রুপ- তারা গোপনে গোপনে তারেক জিয়া এবং বিএনপির সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন। তবে চাঞ্চল্যকর এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে ওই ব্যবসায়ী গ্রুপ কোন আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেননি।
বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন আলোচনায় এবং ব্যাংকপাড়ায় এই রিপোর্টের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে গতকালের রিপোর্টটি ছিল সত্যিকার অর্থেই অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। এখন দেখার বিষয়, এর ফলে এই রিপোর্টটি কি সরকার উপেক্ষা করে, নাকি এর আলোকে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করে। উৎসঃ দ্য ডেইলি স্টার

