বিনোদন ডেস্ক: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘কারার ওই লৌহ কপাট’। এর প্রতিটি কথা-সুর ভাবায়, মনে ছাপ ফেলে। এবার সেই গানকেই ব্যবহার করা হয়েছে হিন্দি সিনেমা ‘পিপ্পায়’। গানটিকে নতুনভাবে তৈরি করেছেন অস্কারজয়ী ভারতীয় সুরকার এআর রহমান, কিন্তু সেটা শুনে মোটেই খুশি নন কেউ। নেটিজেনদের অভিযোগ, গানটিকে বিকৃত করেছেন রহমান।
রাজাকৃষ্ণ মেনন পরিচালিত পিপ্পা আজ মুক্তি পেতে যাচ্ছে আমাজন প্রাইম ভিডিওতে। ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে এর স্পেশাল স্ক্রিনিং, প্রকাশ্যে এসেছে গানও। এ সিনেমায় ব্যবহৃত হয়েছে নজরুল ইসলামের লেখা ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটি। গেয়েছেন একাধিক বাঙালি গায়ক। এদের মধ্যে আছেন তীর্থ ভট্টাচার্য, রাহুল দত্ত, পীযুষ দাস, শালিনী মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
একজন লিখেছেন- মনটা জাস্ট ভেঙে গেল। এআর রহমান এত সুন্দর গানটির পুরো বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। কেউ লিখেছেন, সঠিক সুরে সঠিকভাবে গানটি বানালে ভালো হতো। আসল গানটা শুনলে যে অনুপ্রেরণা পাই, তার সিকিভাগ এটা শুনে আসছে না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গায়ক লুৎফর হাসান বলেন, ‘আমি এআর রহমানের চূড়ান্ত এবং যা তা রকমের ফ্যান। উপাসনার মতো তার সব গান আমার প্রতিদিনের সঙ্গী৷ আমি একটা দিন তার গান ছাড়া কাটাই না। তবে, কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ও সুরের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানটা নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা না করে এআর রহমান মনে হচ্ছে ভুল করলেন। রক্তে আগুন লেগে যাওয়া একটা গানকে তিনি নিয়ে গেলেন ঘুম পাড়ানো গানে। ভালো লাগলো না। অনেকভাবে চেষ্টা করলাম, যেন ভালো লাগে। শেষ পর্যন্ত নিজেকে বললাম ‘সবাই সব জায়গায় সঠিক না, নির্ভুল মানুষ’ও ভুলের ঊর্ধ্বে না।’
নজরুল গায়ক গুলজার হোসেন লিখেছেন, ‘সৃষ্টিশীল মানুষদের একটা সময়কাল থাকে। কৃষ্ণচন্দ্র দে, কমলদাশগুপ্ত, লক্ষীকান্ত পেয়ারেলাল, আরডি বর্মনরাও শেষ জীবনে প্রায় কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। গতবছর এক লেখায় বলেছিলাম এ আর রেহমান তার সেরা সময় পার করে এসেছেন। গত কয়েকবছর ধরে যা সৃষ্টি করছেন সেগুলো আগের মত শ্রোতাদের মনে দাগ কাটছেনা। গত বছর জয় বাংলা’ গান শুনে খুবই বিরক্ত হয়েছিলাম। তাকে দামী লেবেলে মোড়ানো মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের মত মনে হয়েছিল। সর্বশেষ কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গান কারার ঐ লৌহ কপাট নিয়ে তিনি যা করলেন তাতে সংগীতের মানুষ হিসেবে তার যোগ্যতাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। উনার এখন থামা উচিত। প্রতিভার লাশ টেনে দুর্গন্ধ ছড়ানোর মানে হয়না।’
গায়ক সুজিত মোস্তফা লিখেছেন, ‘এরকম একটা বিষয় ঘটুক, আমি কখনোই চাইনি। এটি নজরুলের নিজের সুর করা অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গান। এই গানে এভাবে হাত দেয়া মানে ক্রিয়েটরদের মরাল রাইটের আর কোনো অস্তিত্ব থাকলো না। আমি ব্যক্তিগতভাবে নজরুলের গানে মাত্র দুটো জিনিস চেয়েছি। এক হচ্ছে, আদি রেকর্ড উদ্ধারের পূর্বে ভিন্ন সুরে তার বেশ কিছু গান জনপ্রিয় হয়ে গেছে, তার বিপুল সৃষ্টির তুলনায় এই সংখ্যাটা এমন কিছু বেশি নয়।’
তিনি বলেন, ‘নজরুল যেন টিকে থাকেন এটলিস্ট তার কথাগুলো যেন টিকে থাকে এই গানগুলোর মাধ্যমে, তাই আদি সুরের পাশাপাশি এই সুরগুলোকে আমি সমর্থন দিয়েছি। আর নজরুল গায়কীর মধ্যে ইমপ্রোভাইজ করাটা সক্ষম শিল্পীদের জন্য যেন মুক্ত থাকে সেটাই কামনা করেছি। এইটুকুর জন্য আমাকে যেভাবে একপক্ষ বানিয়ে, দোষী বানিয়ে একটা দল সমানে ঢোল পিটিয়ে যাচ্ছে, এ. আর রহমানের ক্ষেত্রে এবার তারা কি পদক্ষেপ নেয় সেটি আমি দেখতে চাচ্ছি। এ. আর রহমান এবং তার সঙ্গে যারা অংশ নিয়ে এই কান্ডটি করেছে তাদের আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন রাজা কৃষ্ণ মেনন। এতে অভিনয় করেছেন- ইশান খাট্টার, মৃণাল ঠাকুর, প্রিয়াংশু।