শিরোনাম
শুক্র. ডিসে ৫, ২০২৫

শিক্ষক নিয়োগে প্রতিমন্ত্রীর ঘুস কেলেঙ্কারি

  • আমি টাকা নেইনি, আশপাশের লোকজন নিয়েছে
ঢাকা অফিস:অবশেষে ঘুসের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। রোববার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মধ্যস্থতায় ঘুসের সাড়ে নয় লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয় বলে জানান ভুক্তভোগী। তবে পাওনাদার আবু সুফিয়ান এখনো টাকা হাতে পাননি। ডিবি দু-একদিনের মধ্যে তার কাছে টাকাগুলো বুঝিয়ে দেবে বলে জানা গেছে। তবে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রতিমন্ত্রীর এক ঘনিষ্ঠজন টাকাগুলো ডিবির রমনা বিভাগের এক অতিরিক্ত উপকমিশনারের (এডিসি) কাছে দিয়ে গেছেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঘুসের টাকা ফেরত চাওয়ায় রাজধানীর মিন্টো রোডে প্রতিমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ডেকে নিয়ে তিন পাওনাদারকে বেধড়ক পেটানো হয়। এ সময় প্রাণে বাঁচতে এক ভুক্তভোগী আবু সুফিয়ান প্রতিমন্ত্রীর বাসভবনসংলগ্ন মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ের দেওয়াল টপকে ঢুকে পড়েন। ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচিত হয়। ভুক্তভোগী আবু সুফিয়ান ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ডিবিতে অভিযোগ করলে শুরু হয় দেনদরবার। এমন পরিস্থিতিতে ডিবির মধ্যস্থতায় ঘুসের সাড়ে নয় লাখ টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

রোববার রাতে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন কাছে দাবি করেন, টাকাগুলো তিনি নেননি। তার আশপাশের লোকজন নিয়েছিল। পরে তিনি যখনই জানতে পারেন তখন এলাকার এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এগুলো ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেন। তারাই বোধহয় একটা ব্যবস্থা করেছে। তিনি বলেন, যতটুকু শুনেছি টাকা দিয়েছিল খুবই অল্প। তবে অভিযোগে লিখেছে ৯৪-৯৫ লাখ টাকা।

প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, আমি কোনো নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত নই। তবে অনেক সময় আমার অগোচরে অনেকে টাকা নিতে পারেন। অনেক সময় তারা এও বলেন, নিয়োগের বিষয়ে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। অথচ এসব বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এছাড়া ভুক্তভোগীকে মারধরের ঘটনাও সত্য নয় বলে জানান তিনি।

ভুক্তভোগী আবু সুফিয়ান রোববার সন্ধ্যায় বলেন, ‘চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমি ছয়-সাতজনের কাছ থেকে সাড়ে নয় লাখ টাকা নিয়ে প্রতিমন্ত্রীকে দিয়েছিলাম। কিন্তু চাকরি হয়নি। আমার মতো আরও অনেকেই তাকে এভাবে টাকা দিয়েছে। পাওনাদারদের চাপে বাধ্য হয়েই সেদিন তার (প্রতিমন্ত্রীর) বাসভবনে গিয়েছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘মার খেলেও টাকা ফেরত পাওয়ার একটা ব্যবস্থা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী লোক মারফত ডিবির কাছে সাড়ে নয় লাখ টাকা দিয়েছেন। ডিবি এক-দুদিন পর গিয়ে টাকাগুলো ফেরত নিতে বলেছে।’

ডিবি রমনা বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিমন্ত্রী ঘুসের পাওনা টাকা ফেরত দিয়েছেন। তবে এই টাকা প্রকৃত পাওনাদারদের (চাকরিপ্রার্থী) কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার বিষয়ে ডিবির দায়িত্বশীল কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদকে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি।

এর আগে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের যুগ্ম-মহাসচিব ও খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি আবু সুফিয়ান প্রতিমন্ত্রীকে দেওয়া ঘুসের টাকা ফেরত পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চলতি বছরের ২৩ মে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে উল্লেখ করেন- প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে ২০২২ সালের ৮ জুন প্রতিমন্ত্রী জাকিরের বাসায় তাদের বৈঠক হয়। সেখানে মন্ত্রী ৪৮ জনের নিয়োগের জন্য ৬ কোটি টাকার রফা করেন। মন্ত্রীর ভাইয়ের ছেলে লিটন ও ড্রাইভার মোমিনকে টাকা বুঝিয়ে দিতে বলেন তিনি। অগ্রিম হিসাবে ৯৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন আবু সুফিয়ান ও নাছির হালদার নামে চাকরিপ্রার্থী। তবে এদের কারও ভাগ্যে শেষ পর্যন্ত চাকরি জোটেনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *