পশ্চিমবঙ্গ নিউজ ডেস্ক: ভারতজুড়ে পালিত হচ্ছে দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৭তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান। পালন করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপির তীব্র সমালোচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেনো এখনও পর্যন্ত নেতাজির জন্মদিন দেশটিতে জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি? আরও একবার প্রশ্ন তুলেছেন মমতা।
এদিন নেতাজির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, জাতিরজনক মহাত্মা গান্ধী নেতাজিকে দেশনায়ক এবং জাতীয় নেতা বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি।
তবে এই ক্ষোভ শুধু মমতার নয়, গোটা দেশবাসীর। বিশেষ করে বঙ্গবাসীর। বর্তমান বিজেপি সরকারের পাশাপাশি একদা কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারও ছিল এ বিষয়ে উদাসীন। তবে বিরোধী ইন্ডিয়া (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স) জোট মমতার সঙ্গেই কংগ্রেস রয়েছে বলে, মঙ্গলবার মমতার সমালোচনায় কংগ্রেসের নাম আসেনি। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
মমতা বলেছেন, ২০ বছর ধরে চেষ্টা করেও নেতাজির জন্মদিন জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করাতে পারেননি। এই কারণে তিনি লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। এই প্রসঙ্গেই নাম না করে বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেছেন, দেশে রাজনৈতিক প্রচারের কারণে ছুটি হয়ে যায় অথচ নেতাজির জন্মদিনে ছুটি ঘোষণা করা হয় না।
কলকাতার রেড রোডের মঞ্চে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বিজেপি সরকার বলেছিল নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য উদঘাটন হবে। কিন্তু তা হয়নি। দেশের দুর্ভাগ্য যে নেতাজির মৃত্যুর দিন কেউ জানতে পারল না। পাশাপাশি নীতি আয়োগের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, এখন তাদের না আছে নীতি, না আছে আয়োগ।
এক্ষেত্রে মমতা এও জানিয়েছেন, পশ্চিবঙ্গ সরকার ৬৪টি ফাইল প্রকাশ্যে এনেছিল। কিন্তু বিজেপি এত বছরেও কোনও রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। নেতাজির তৈরি করা প্ল্যানিং কমিশন তুলে দিয়েছে বিজেপি সরকার, এমনও অভিযোগ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার বক্তব্য, প্ল্যানিংটা এখন হিংসা, ঘৃণায় পরিণত হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্র শুধু ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি করছে। মমতার আক্ষেপ, নেতাজিকে সবাই ভুলে যাচ্ছেন। শুধুমাত্র রাজনীতি ছাড়া কিছু হচ্ছে না।
এর আগে সোমবারও(২২ জানুয়ারি) বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখিয়েছেন মমতা। গতকাল মোদি সরকার যখন রাম মন্দিরে উদ্বোধনে ব্যস্ত ছিলেন। সেই অনুষ্ঠান শেষে পশ্চিমবঙ্গে সংহতি যাত্রার আযোজন করেছিলেন মমতা। দক্ষিণ কলকাতার হাজরা থেকে পার্কসার্কস ময়দানে অবদি হাটেন মমতা। সঙ্গে ছিলেন সব সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুরা।
মিছিল শেষে সভা থেকে বিজেটির উদ্দেশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেছেন, ভোটের নামে দেশ বিক্রি করতে চাইছে একদল লোক। ভোটের সময় ধর্মে সুড়সুড়ি দিচ্ছে তারা। নাম না করেই বিজেপিকে নিশানা করে তিনি বলেছিলেন, বিভাজনের রাজনীতি করে হিন্দু ভোটের ভাগাভাগি করার চেষ্টা করে তারা। এখন কিছু লোককে টাকা দিয়ে কিনেছে মুসলমান ভোট ভাগ করার জন্য। তবে তিনি বাংলার মানুষকে বার্তা দিয়ে বলেছেন, সব ধর্মকে বাঁচিয়ে রাখতে উদ্যোগী হতে হবে বাংলাকেই।
বিজেপির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের আগের বাম সরকার অর্থাৎ সিপিএমকেও তুমুল আক্রমণ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার দাবি, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর রাজ্যে অনেক প্রাণহানি হয়েছিল। কিন্তু সেই সময় রাজ্য সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। সিপিএম প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়েই হঠাৎ ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। বলেন, জোটের নাম আমি দিয়েছি কিন্তু আমিই সেই জোটে সম্মান পাচ্ছি না। অভিযোগ, বিরোধী জোটের বৈঠক নিয়ন্ত্রণ করে সিপিএম, সেটা তিনি মানবেন না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরো বলেছিলেন, ৩৪ বছর ধরে ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। কিন্তু তারা কোনও মসজিদ, গির্জা বা মন্দির কিছুই করেনি। তারা নাকি ধর্ম মানে না। কিন্তু আমি ধর্ম মানি। আর এটাও মানি, ধর্ম যার যার, উৎসব সকলের। ইন্ডিয়া জোট প্রসঙ্গ তুলে সিপিএমের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপাশি তিনি পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে আহ্বান জানিয়েছেন, বিজেপিকে একটিও ভোট না দেওয়ার জন্য।
মমতার কথায়, যত রক্ত দেওয়ার তিনি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু আসন্ন লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে একটিও আসন নিতে দেবেন না।