- মন্তব্য করতে নারাজ বিজিবি মহাপরিচালক
- প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন উগান্ডা ফেরত মন্ত্রী
বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: যশোরের ধান্যখোলা সীমান্তে বিএসএফের (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) গুলিতে রইস উদ্দিন নামে বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) এক সদস্য নিহত হয়েছেন। সোমবার ভোরে এ ঘটনা হয়। এ ঘটনার পর সীমান্তে থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নিহত বিজিবি সদস্যে রইস উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়।
স্থানীয়রা জানান, ভারতের বনগাঁ মহাকুমার সুটিয়া ও বাংলাদেশের ধান্যখোলা সীমান্ত দিয়ে সোমবার ভোরে গরু পাচার করছিল চোরাকারবারিরা। এ সময় চোরাকারবারিদের ধাওয়া করে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়ে বিএসএফ সদস্যরা। ঘটনাস্থলে থাকা বিজিবির সিপাহী রইস উদ্দীন বিএসএফ সদস্যদের দেখে সামনে এগিয়ে যান। এ সময় তিনি সাদা পোশাকে ছিলেন।
রইস উদ্দীন নিজেকে বিজিবি সদস্য পরিচয় দেন এবং ঘটনার ব্যাপারে জানতে চান। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিচয় পাওয়ার পরও বিএসএফ সদস্যরা রইস উদ্দীনকে গুলি করে আহত করে। পরে আহত অবস্থায় তাঁকে ভারত সীমান্তের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয়রা বলছেন, ভারতের এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দুপুর ২টার দিকে রইস উদ্দীনের মৃত্যু হয়।
মন্তব্য করতে নারাজ মহাপরিচালক
রইস উদ্দিনের নিহত হওয়ার স্থান পরিদর্শন করেছেন বিজিবির মহাপরিচালক এ কে এম নাজমুল হাসান। এ সময় স্থানীয় সাংবাদিকরা মহাপরিচালকের সাথে হত্যার ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে গাড়িতে উঠে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বেনাপোল থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে ধান্যখোলা বিওপি ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি। এর আগে, তিনি ৪৯ বিজিবি’র কোম্পানির সদর দফতর শিকারপুর ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং বিজিবি সদস্যদের সাথে কথা বলেন।
বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জামিলের স্বাক্ষর করা সোমবার রাতের এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্য রইস উদ্দিনের নিহত হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ২২ জানুয়ারি সাড়ে ৫টার দিকে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপির জেলেপাড়া পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় ভারত থেকে আসা একদল গরু চোরাকারবারিকে সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখলে দায়িত্বরত বিজিবি টহল দল তাদের চ্যালেঞ্জ করলে দৌঁড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিজিবি টহল দলের সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইস উদ্দীন চোরাকারবারিদের পেছনে ধাওয়া করতে করতে ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায়, তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘ঘটনার পরপরই এ বিষয়ে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করা হয় এবং জানা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই সৈনিক মৃত্যুবরণ করেছে। বিএসএফকে বিষয়টির ব্যাপারে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানোর পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবে তীব্র প্রতিবাদলিপি প্রেরণ করা হয়েছে।’
সীমান্তে বিজিবি হত্যা ও উগান্ডা ফেরত মন্ত্রীর বয়ান
উগান্ডা ফেরত পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয় সীমান্তে বিজিবি হত্যার বিষয়ে। যশোরের বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে একজন বিজিবি সদস্য মেরে ফেলেছে এ ঘটনায় ভারতের তরফে কোন বক্তব্য এসেছে কি-না? জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ‘এ নিয়ে এখনই কথা বলতে চান না’ বলে প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।
সেখানে বিজিবি জোয়ান নিহত হওয়ার ঘটনা বিষয়ক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “দেখুন… আমি আজ দুপুরে ফিরেছি (উগান্ডা থেকে)। আমি ডোমেস্টিক (অভ্যন্তরীণ) কোনো বিষয়ে এখনো মনোযোগ দিতে পারিনি। এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যদি কোন বক্তব্য থাকে, সেটি অবশ্য আপনাদের বলা হবে। এ বিষয়ে আমরা এখন কথা বলতে চাই না।’
সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা নতুন কোনো ইস্যু নয়। যুগের পর যুগ এটি চলছে। বিশেষ করে গত দেড় দশকে অসংখ্য বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও জার্মান ভিত্তিক বাংলা সংবাদ মাধ্যম ডয়েচেভেলের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ২০১৫ সাল থেকে এ পর্ন্ত বিএসএফের হাতে ২৫৬ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ৩০০ জন। এসব হত্যাকান্ডের প্রতিশোধতো দূরের কথা কথনো ঢাকার পক্ষ থেকে শক্ত কোনো প্রতিবাদও জানানো হয়নি।