শিরোনাম
বৃহঃ. ডিসে ৪, ২০২৫

লোকসান ও পাহাড়সম বকেয়া নিয়ে ধুঁকছে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত

  • রেন্টালের মুনাফা কার পকেটে
  • বিদ্যুৎ খাতের মালিকানা কার হাতে

ঢাকা অফিস: বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম প্রধান ভিত্তি। এ খাতের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ জনগণের পক্ষে রাষ্ট্রের হাতে থাকাই বাঞ্ছনীয়। নইলে আশঙ্কা থাকে জাতীয় নিরাপত্তা ব্যাহত হওয়ার। কিন্তু বাংলাদেশে সরকার এই খাতকে ব্যক্তি মালিকদের হাতে তুলে দেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে একগুচ্ছ পদক্ষেপ কার্যকর করেছে। সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নের নীতিই ছিল ব্যক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারি খাতকে সংকুচিত করে আনা। এ খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের চেয়ে সরকার আমদানিকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।

ক্রমাগত লোকসান ও পাহাড়সম বকেয়া নিয়ে ধুঁকছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। অপারেশনাল প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫০০ কোটি ডলারের দেনা আছে। মিডিয়ার এসব রিপোর্টের সঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলাদেশ ব্যাংকে ডলার সঙ্কটের কথা তুলে ধরে বলেন, প্রতি মাসে ১০০ কোটি ডলার পাওনা পরিশোধে বাধ্যবাধকতা আছে। এই সঙ্কট সমাধানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসারদের (আইপিপি) পাওনা পরিশোধের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ‘সোভারিন বন্ড’ ইস্যু করা হবে। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে সুপরিচিত ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বিশেষ বন্ড চালু করেছে সরকার। প্রাথমিকভাবে এর মূল্য ১২,০০০ কোটি টাকা। বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বিল ২০.৬২ বিলিয়ন টাকা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিলকে কমিয়ে ৪২২.৩ বিলিয়ন টাকায় আনা হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ফাইবার টু ফ্যাশন।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছে ২৫,০০০ কোটি টাকা এবং পেট্রোবাংলার কাছে ৮,০০০ কোটি টাকার দেনা আছে। আদানি, শেভরনের মতো বিদেশি এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মতো কোম্পানির কাছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ দেনা আছে সরকার।

এর ফলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে। পাওনা পরিশোধের ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও পাহাড়সম দেনা বাকি থাকার কারণে জ্বালানি সরবরাহকারীদের মধ্যে আস্থার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এর ফলে অপারেশনাল ইস্যু এবং জ্বালানি সঙ্কটের সৃষ্টি হচ্ছে। সব মিলে লোডশেডিংয়ে ভূমিকা রাখছে। আমদানি নির্ভরতা এবং ডলারের সঙ্কট এর ওপর আরও চ্যালেঞ্জ যোগ করেছে। যদি সরকার বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদেরকে স্থানীয় মুদ্রায় পাওনা পরিশোধ করতে চায় তবুও বছরে এই খাতের প্রয়োজন ১২ বিলিয়ন ডলার। তবে বিনিময় হার নিয়েও মতবিরোধ রয়ে গেছে। দেনা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা মিটাতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তাতে প্রতিদিন তিন কোটি ৩০ লাখ ডলার ঘাটতির মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এক্ষেত্রে সরকার উৎপাদন খরচ ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে ফারাক মিটাতে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। ৫০,৮৫৮.২৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করা সত্ত্বেও উল্লেখ করার মতো ৪৭,৭৮৮.১৭ কোটি টাকা বিপিডিবির লোকসান হয়েছে বলে বলা হয়েছে।

এ খাতে সরকারের সুস্পষ্ট নীতি ছিলো, বেসরকারি খাত থেকে কত বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এজন্য ব্যয় বাড়ার ঝুঁকিকে তারা মোটেও পরোয়া করেনি। বরং ‘যত দাম লাগুক, আমরা বিদ্যুৎ চাই’ বলে বেসরকারি খাতকে অবাধ কার্যক্রম পরিচালনার লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। এগুলো যেন কোনোভাবে ঠেকানো না যায় সেজন্য করা হয়েছিল দায়মুক্তি আইন। প্রথমে বিদ্যুতের সঙ্কটকে পুঁজি করে, পরবর্তীকালে সঙ্কটের ধোঁয়া তুলে ব্যক্তি খাতকে মুনাফা লোটার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের মধ্যে রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিদায় নেয়ার কথা থাকলেও তা টিকিয়ে রাখা হলো এবং মূলত ব্যবসায়ীদের স্বার্থে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিকল্প সুযোগ সত্ত্বেও চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ না পাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে রেন্টালের মেয়াদ বাড়ানো হয়। বিইআরসি এক সময় সুপারিশ করেছিল যে, রেন্টালের মেয়াদ আর যেন বৃদ্ধি না করা হয়। সে সময় বিইআরসির শুনানিতে বিজিএমইএ, এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সবাই সম্মত হয়েছিল যে, রেন্টালের মেয়াদ আর বৃদ্ধি করা যাবে না। কিন্তু পরবর্তীকালে তা কার্যকর হয়নি, এখনো সেগুলো চলমান রয়েছে। কার্যত ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ীই এই খাতের উন্নয়ন চলছে। তাতে করে ব্যবসায়ীদের পকেট ছাড়া আর কারো কোনো উন্নয়ন ঘটেনি।

সম্পর্কিত পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *