কলকাতা: একুশে ফেব্রুয়ারি ‘মহান শহীদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে’র গুরুত্ব তুলে ধরতে বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা ও বহুভাষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এতে অংশ নেন কলকাতায় অবস্থিত চীন, জাপান, রাশিয়া, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড এবং নেপাল কনস্যুলেট প্রতিনিধিরা।
এসময় তাদের নিজ নিজ ভাষার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিল মনোমুগ্ধকর। এছাড়া অনুষ্ঠানে কলকাতার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।
অনুষ্ঠানে উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, পৃথিবীর প্রতিটি ভাষাকে রক্ষা করার, বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। আজকের দিনটি আমাদের শেখায়, নিজের মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্যের ভাষাকেও শ্রদ্ধা করতে হবে।
দিনটির গুরুত্ব তুলে ধরে উপ-হাইকমিশনার আরও বলেন, প্রতিবছর পৃথিবী থেকে কমপক্ষে নয়টি করে ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তার মানে প্রতি ৪০ দিনে একটি করে ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে কম সংখ্যক লোক, যে ভাষাগুলোয় কথা বলে থাকেন, সে ভাষাগুলোই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীতে এক সময় সাড়ে সাত হাজার ভাষা ছিল। তা আজ অনেক কমে গেছে। ১৯৭৫ সালে যতগুলো ভাষা পৃথিবীতে ছিল, তার মধ্যে ৬০ থেকে ৬১ শতাংশ ভাষা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
এ ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আমার আশঙ্কা, বড় কিছু ভাষা ছাড়া ক্ষুদ্র জনজাতির ৯০ শতাংশ ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এর জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, আমরাই যেন এ ভাষাগুলোর পরিচর্যা করতে পারি। ভাষাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে যা যা করণীয়, সবই করতে হবে, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র যেসব জনগোষ্ঠী রয়েছে, যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়, তাদের শিশুরা যাতে নিজের মায়ের ভাষাগুলো চর্চা করতে পারে, শিখতে পারে, এ জন্য আমাদের বর্তমান সরকার যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের ভাষায় বই তৈরি হয়েছে। যেগুলো বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। স্কুলে শৈশব থেকেই সেসব ভাষা শেখানো হচ্ছে, যাতে তারা নিজেদের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং চর্চাটা রাখতে পারে। এটি প্রত্যেক ভাষার মানুষকে করতে হবে। তার ভাষার পাশাপাশি যেন তার পাশের বাড়ির ভাষাও বেঁচে থাকে। এটি আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে। ভাষা না বাঁচলে সভ্যতা বাঁচবে না। সব ভাষাকে শ্রদ্ধা করার পাশাপাশি সব ভাষা রক্ষা করতে হবে।
এর আগে উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করা হয়েছে দিবসটি। উপ-হাইকমিশন চত্বরে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও অর্ধনমিত করার মাধ্যমে দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। পতাকা অর্ধনমিত করেন উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস।
এরপর ভাষা শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন, মিশন প্রাঙ্গণে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন আয়োজিত প্রভাতফেরি শুরু হয়। প্রভাতফেরিটি ৩ নম্বর সোহরাওয়ার্দী অ্যাভিনিউস্থ ‘বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্র’ থেকে শুরু হয়ে পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট ক্রসিং পার হয়ে এজেসি বোস রোড ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা দিয়ে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন চত্বরে এসে শেষ হয়।
এ প্রভাতফেরিতে অংশ নেন কলকাতার কবি, সাহিত্যিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিজীবীর এবং বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ। প্রভাতফেরি শেষে উপ-হাইকমিশন চত্বরে অবস্থিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন মিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।