- বিএসএমএমইউতে শতকোটি টাকার দুর্নীতি
- রিভার প্রকল্পে এক গোপালগঞ্জেই ৪৫৫ কোটি টাকায় ৬৭ স্কুল
- ছাত্রলীগ ছাড়া সব নিয়োগ ‘ক্যান্সেল’, চবি রেজিস্ট্রারকে শাসালেন নেতারা
ঢাকা অফিস, ১৮ মার্চ: অনেক যোগ্য ব্যক্তি থাকার পরও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে কনক কান্তি বড়ুয়ার পর দলীয় বিবেচনায় উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ডা. শারফুদ্দিন আহমেদকে। ডা. শারফুদ্দিন আহমেদকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া ছিল একটি চমক। প্রধানমন্ত্রী তাকে এ দায়িত্ব দিয়েছিলেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি নিয়োগ বাণিজ্য সহ নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। দু’টি সংস্থা তদন্ত করে দেখে যে, শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ বাজারে রয়েছে বাস্তবে অভিযোগ তার চেয়ে বেশি। তার বিরুদ্ধে প্রধান পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে একটি হল নিয়োগ বাণিজ্য। টাকা ছাড়া বিএসএমএমইউ-তে কোন নিয়োগ হত না। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন কেনাকাটায় তার বাণিজ্য। তৃতীয়ত, পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বাণিজ্য, চতুর্থত, শারফুদ্দিন আহমেদ একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছেন, যে বাহিনী উপাচার্যের নামে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদাবাজি করত। পঞ্চমত, অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতা।
এই অভিযোগ গুলোর ব্যাপারে দু’টি তদন্তকারী সংস্থার তদন্তকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে দু’শত কোটি টাকারও বেশি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ অভিযোগগুলো নিয়ে এখন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কাজ করছে। দুর্নীতি দমন কমিশন ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিদায়ী উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকমের অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ জানতে পেরেছে। আর এর ফলে অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ একাধিক দুর্নীতির মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন। উপাচার্যের দায়িত্ব শেষ করার পরপরই তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের বারান্দায় ছোটাছুটি করতে হবে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা। ২৮ মার্চ শারফুদ্দিন আহমেদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে ডাকতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে এখন প্রতিনিয়তই অভিযোগ দাখিল করা হচ্ছে। বিশেষ করে এড-হক ভাবে যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের কাছ থেকে কি পরিমাণ অর্থ নেওয়া হয়েছে এবং কি পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ইত্যাদি বিস্তারিত অভিযোগ এখন দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা হচ্ছে।
বিদায়ী উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ একরকম তোপের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব থেকে বিদায় নিচ্ছেন। তার জায়গায় নতুন উপাচার্য হিসেবে ইতোমধ্যে সরকার নিয়োগ দিয়েছেন ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নূরুল হককে। ডা. দ্বীন মোহাম্মদ আগামী ২৮ মার্চ অপরাহ্ণে বিএসএমএমইউ-এর উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
রিভার প্রকল্পে এক গোপালগঞ্জেই ৪৫৫ কোটি টাকায় ৬৭ স্কুল
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা হিসেবে বেশি পরিমাণে উন্নয়ন হচ্ছে ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ। রিভার প্রকল্পের আওতায় গোপালগঞ্জে ৬৭টি স্কুল কাম বন্যা আশ্রয়স্থল স্থাপনের কাজ পাচ্ছে ন্যাশনাল ডেভেলাপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৪৫৫ কোটি টাকা। রিভার প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩২৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রস্তাবটি বুধবার ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভার কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এতে সভাপতিত্ব করবেন।
ছাত্রলীগ ছাড়া সব নিয়োগ ‘ক্যান্সেল’, চবি রেজিস্ট্রারকে শাসালেন নেতারা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগ ছাড়া সব নিয়োগ বাতিলের হুমকি দিয়েছে ছাত্রলীগ। বুধবার বিকেলে সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত কম্পিউটার ল্যাব সহকারী ইয়াহিয়া টিপুকে রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আটকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহম্মেদকে কড়া ভাষায় শাসায় ছাত্রলীগ নেতারা। তারা বলেন, “ছাত্রলীগের বাইরে সব নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যাক্তির” নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
জানা গেছে, ইয়াহিয়া দৈনিক ৫৫০ টাকা মজুরিতে অস্থায়ীভিত্তিতে মনোবিজ্ঞান বিভাগের ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ পান। বুধবার দুপুরে ইয়াহিয়া রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদান করতে আসেন। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে রেজিস্ট্রার ভবনের ভেতরে আটকে মারধর করে। ইয়াহিয়া অভিযোগ করেন, দুপুরে আমি চাকরিতে যোগদান করতে এসেছিলাম। ছাত্রলীগের নেতারা আমাকে জিজ্ঞেস করছে, আমি ছাত্রলীগ করি কি-না। আমি বলেছি, না। সাথে সাথে তারা আমাকে মারধর করে।
ইয়াহিয়াকে মারধর ও রেজিস্ট্রারকে হুমকি-ধমকি দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, ছাত্রলীগ নেতা ওয়াহিদুল ইসলাম রেজিস্ট্রারকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বাইরে সব নিয়োগ ‘ক্যান্সেল’ করতে হবে। ওয়াহিদ রেজিস্ট্রারের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলতে থাকেন, “এখনো পিছনে বসে আছে ও (ইয়াহিয়া)। ও ছাত্রলীগ করে না। তবুও ওরে চাকরি দিয়েছেন। ওর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ খাইছে ভিসি ম্যাম।” ঘটনাস্থলে বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা উপস্থিত ছিলেন। তারা অসৌজন্যমূলকভাবে রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় ছাত্রলীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোরশেদুল আলম রিফাত রেজিস্ট্রারকে হুমকি দেন, “ছাত্রলীগের বাইরের এগুলা ক্যান্সেল। ছাত্রলীগ কর্মী না। ছাত্রলীগের বাইরের নিয়োগ ক্যান্সেল। ছাত্রলীগের পোলারে নিয়োগ দিলে সমস্যা নাই। ছাত্রলীগের বাইরে যেগুলা, ওইগুলা ক্যান্সেল। ছাত্রলীগের পোলাপাইনের চাকরি লওয়ার অধিকার আছে। বাইরের পোলাপাইনের কী অধিকার? ছাত্রলীগের বাইরে সব ক্যান্সেল।”
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষে নতুন উপাচার্যকে এসব নিয়োগের ব্যাপারে বলার জন্য রেজিস্ট্রারকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকেন তারা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুমন মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মনসুর আলীকেও উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। তারাও ছাত্রলীগ নেতাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন সদস্যও ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।