- হত্যা করে লাশ নিয়ে গেছে বিএসএফ
- ভারতকে খুশি রাখাই সরকারের পররাষ্ট্রনীতি: মির্জা ফখরুল
বাংলাদেশ নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ সীমান্তে বেপরোয়া ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) তান্ডব কিছুতেই থামছে না। আবারো তাঁরা বাংলাদেশ সীমান্তে গুলি চালিয়ে দুজনকে হত্যা করেছেন। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন। বিএসএফ দুজনের লাশ নিয়ে গেছে।
গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার পর তেঁতুলিয়া উপজেলার খয়খাটপাড়া সীমান্ত এলাকার ৪৪৬ নম্বর মেইন পিলারের ১৪ (আর) এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ভারতের ফকিরপাড়া বিএসএফ ক্যাম্পের সদস্যরা নিহত দুজনের লাশ নিয়ে গেছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পঞ্চগড় ১৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল যুবায়েদ হাসান টেলিফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে দুজন নিহত হয়েছেন। তাঁদের লাশ বিএসএফ নিয়ে গেছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি। এ ঘটনায় বিজিবি-বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডার কার্যালয়ে পতাকা বৈঠক হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে। সেখানে এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে লাশ দুটি ফেরত চাওয়া হবে।’
নিহত দুজন হলেন তেঁতুলিয়া উপজেলার মাগুড়া এলাকার আবদুল জলিল (২৪) ও একই উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের ব্রহ্মতল এলাকার ইয়াসীন আলী (২৩)।
বিজিবি ও স্থানীয় লোকজন বলছেন, মঙ্গলবার রাতে তিরনইহাট ইউপি সদস্য আজহারুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য হাফিজ উদ্দিন, স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন ও শামসুল হক তাদের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান। পরে তারা গরু আনতে ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় যান। এক পর্যায়ে ভারতের ফকিরগাছ বিএসএফ ফাঁড়ির সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। পরে বুধবার ভোরে বিএসএফের ১৭৬ ব্যাটালিয়নের ফকিরপাড়া ক্যাম্পের সদস্যরা তাঁদের লাশ নিয়ে যায়। ঘটনার সময় তাঁদের সঙ্গে থাকা অন্যরা পালিয়ে এসে বিষয়টি নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে জানান। পরে তাঁরা জনপ্রতিনিধিদের ও বিজিবিকে বিষয়টি জানান।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুজয় কুমার রায় ও তীরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. মানিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিজিবির কাছে ছবি দেখে নিহত দুজনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। তাঁদের সঙ্গে গিয়ে যাঁরা পালিয়ে এসেছেন, তাঁরাই নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে জানিয়েছেন। লাশ দুটি বিএসএফ গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। আমরা চাই নিহতদের মরদেহ দ্রুত এনে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হোক।’
নিহত ইয়াছিন আলীর মা জবেদা বেগম বলেন, ইউপি সদস্য আজহারুল ইসলামসহ কয়েকজন রাতে আমরা ছেলেকে ডেকে নিয়ে যান। আমি ছেলেকে যেতে নিষেধ করেছিলাম। সকালে খবর পাই, আমার ছেলেকে বিএসএফ গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমি আমার ছেলের মৃত্যুর বিচার চাই।
ভারতকে খুশি রাখাই আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি: মির্জা ফখরুল
ভারতকে খুশি রাখাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আব্দুল জলিল এবং ইয়াসীন আলী নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার এক বিবৃতিতে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশিদের রক্তে প্রতিদিন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত রঞ্জিত হচ্ছে। সীমান্তবর্তী বাংলাদেশি মানুষের জীবনের নিরাপত্তা সম্পূর্ণভাবে বিপন্ন। বিএসএফের এ ধরণের হত্যাকাণ্ড সম্ভব হচ্ছে কেবল ডামি আওয়ামী সরকারের নতজানু নীতির কারণে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে নিহত হওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার বিচার চাওয়া দুরের কথা, প্রতিবাদ করতেও পারে না আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। দেশের সার্বভৌমত্ব দিনদিন দুর্বল করা হয়েছে বলেই আওয়ামী সরকার বাংলাদেশি হত্যায় নীরবতা পালন করছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতকে খুশি রাখাই যেন ভোটারবিহীন আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্রনীতি। গণতন্ত্রহীন বাংলাদেশি জনগণের নিরাপত্তাকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে ভিনদেশি ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে জনগণের শাসন নেই বলেই বিএসএফ নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। তারা জানে বাংলাদেশের অবৈধ শাসকগোষ্ঠী তাদের রক্তপাত থামাতে এগিয়ে আসবে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিএসএফের গুলিতে নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’